দেশে বড় শহরগুলোতে সিটি করপোরেশন ছাড়াও জেলা–উপজেলায় ছোট শহরগুলোতে একের পর এক গড়ে তোলা হয়েছে পৌরসভা। কিন্তু সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কোনোটাতেই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এমনকি অনেক পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কিছু নেই। কিন্তু ঠিকই পৌর বাসিন্দারা পৌর কর দিয়ে যাচ্ছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভায় যে চিত্র দেখা গেল, তা খুবই ভয়াবহ। বর্জ্যের কারণে সেখানে একটি এলাকার মানুষের সারা বছরই অসুখ–বিসুখের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।
চৌমুহনী পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থায়ী–অস্থায়ী কোনো কাঠামো নেই। শুধু তা–ই নয়, এর জন্য নিজস্ব জায়গাও নেই তাদের। ফলে নোয়াখালী–কুমিল্লা মহাসড়কের পাশে সরকারি জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কয়েক দিন পরপর আগুন দিয়ে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হলেও সেখানে বর্জ্যের বিশাল স্তূপ হয়ে গেছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। আর বর্জ্য পোড়ানোর সময় আশপাশের বাতাস দূষিত হয়ে পড়ে। বর্জ্যের ময়লা পানি গড়িয়ে গিয়ে পড়ে আশপাশের ডোবা বা পুকুরে। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে পাশের চৌরাস্তা খালপাড় এলাকায়। চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে ওই এলাকার ৩০০ পরিবারে। সারা বছরই তাদের অসুখ–বিসুখ লেগে থাকে।
ওই এলাকায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে বয়স্ক নারী-পুরুষ, শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। তাঁদের অনেকেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন ধোঁয়ার কারণে। বর্জ্যের স্তূপ থেকে চুইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে পাশের ডোবায়। ওই ডোবার পানি ব্যবহার করা হয় গোসল, কাপড় ধোয়া ও রান্নাবান্নায়। আর এ কারণে পেটের অসুখ, খোসপাঁচড়াসহ নানা ধরনের অ্যালার্জি লেগে থাকে সারা বছর। শিশুরাও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
বোঝাই যাচ্ছে, সেখানকার জনস্বাস্থ্য পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। একজন গৃহিণী বলছেন, বর্জ্যের দুর্গন্ধে ঠিকমতো খেতে পারেন না। খাবার খেতে বসলে বমি আসে। যখন আগুন দেওয়া হয়, তখন ধোঁয়ায় ঘরদুয়ার অন্ধকার হয়ে যায়। শ্বাস নিতে পারেন না। কাশি ও শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। ওষুধেও কাজ করে না। জন্ম থেকেই এখানে বসবাস করছেন, অন্য কোথায়ও যাওয়ার জায়গাও নেই। হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদও করেন না কেউ।
চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্যাহ বলেন, পৌরসভার নিজস্ব জায়গা না থাকায় এবং সরকারি বরাদ্দ না থাকায় স্থায়ীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে কিছুটা সময় লাগবে।
একটি এলাকার মানুষ এভাবে দিনের পর দিন রোগে–শোকে ভুগতে থাকবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানে অবশ্যই পৌর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। নয়তো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নিজস্ব জায়গা ও সরকারি বরাদ্দ পেতে কেন দীর্ঘ সময় লাগবে। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।