২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ফেসবুকে অপতথ্য ছড়ালে তার দায় কে নেবে

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে মেটা (সাবেক ফেসবুক) এখন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের জনপ্রিয় মাধ্যম। কিন্তু ডিজিটালি রাইট লিমিটেডের (ডিআরএল) একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এতে অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে মানুষ বিভ্রান্তও হতে পারে।

২০১৮ সালের ২৪ মে মেটা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপননীতি প্রয়োগ শুরু করে। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞাপনদাতাকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বচ্ছতার ঘোষণা দিতে হয়। স্বচ্ছতার ঘোষণার মধ্যে কে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ দিচ্ছেন, তাঁর নাম, ঠিকানা, ওয়েবসাইটের ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি থাকতে হয়। ডিআরএল ৩১৪টি স্বচ্ছতার ঘোষণা (ডিসক্লেইমার) বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ ব্যয় করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ঠিকানা হিসেবে শুধু জেলার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ঠিকানা নেই।

ডিআরএল বলছে, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। ফলে ভোটাররা তাঁর এলাকার সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন সম্পর্কে সঠিক তথ্য পান। ভার্চ্যুয়াল জগতে বিজ্ঞাপনের নীতিমালা না মানায় সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে সমস্যা হয়।

মেটা এখনো ডিআরএলের প্রতিবেদনের ওপর কোনো মন্তব্য করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে ফেসবুকের আট কোটি গ্রাহকের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যবহারকারীদের আচার-আচরণ বিশ্লেষণ করে যাঁরা উদারপন্থী, তাঁদের কাছে উদার ও কট্টরদের কাছে কট্টর বার্তা পাঠিয়েছিল ট্রাম্প শিবির। তা ছাড়া মেটার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রামের বিরুদ্ধে কিশোর-কিশোরীদের বিষণ্নতায় ভোগা এমনকি আত্মহত্যায় ঠেলে দেওয়ার মতো অভিযোগ আছে। এসব নিয়ে তাদের কংগ্রেসের শুনানিতেও হাজির হতে হয়েছিল।

এখানেই শেষ নয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে মেটাকে ব্যবহার করা হয়। একই অভিযোগ আছে ভারতেও। ভারতে মেটা সে দেশের হিন্দুত্ববাদী সরকারকে ঘাঁটাতে চায় না বলে কথিত আছে।

ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১৯ সালে ঘৃণা ছড়াতে মেটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে প্রতিষ্ঠানটি একটি আইনি সংস্থাকে নিয়োগ দেয়। পরের বছর দিল্লিতে রায়টের প্রেক্ষাপটে সংস্থাটি জানায়, মেটা ঘৃণাসূচক প্রচার বন্ধে কিংবা রায়ট ছড়িয়ে পড়া রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওই রায়টে ৫০ জন নিহত হন, যার বড় অংশই ছিল মুসলিম। কাশ্মীরেও মেটার ভূমিকা নিয়ে বড় সমালোচনা আছে।

কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের শুনানিতে মেটাকে হাজির হতে হয়েছিল। বাংলাদেশে অপতথ্য বা মিথ্যা তথ্যের ঝুঁকি এড়াতে মেটা কী করবে? সংসদের ডাকে মেটা কি হাজিরা দেবে? অবশ্য সংসদ যে রাজনৈতিক অপতথ্য ছড়ানোর দায়ে মেটাকে ডাকবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাংলাদেশে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হয় না।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জবাবদিহির আওতায় আনার একটা চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সেই আইন আদৌ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনতে, নাকি ব্যক্তিগত তথ্য হস্তগত করতে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

জানা যাচ্ছে, মেটার কাছে থেকে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য চেয়ে অনুরোধের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। কী ধরনের তথ্য মেটা সরবরাহ করছে, তা প্রকাশ করেনি। তবে গুগলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার গুগলের কাছে মোট ৮০০টি অনুরোধ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে ৭৫টি অনুরোধ মানহানি ও সরকারের সমালোচনাবিষয়ক।

এমন একটা প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে মেটা বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের গ্রহীতাদের সতর্ক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।