নদ-নদী-খালবিধৌত দেশে অসংখ্য গ্রামে সেতু বা কালভার্ট ছাড়া সড়ক যোগাযোগ সম্ভব নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেতু বা কালভার্ট নির্মিত হলেও অনেক এলাকা আবার প্রকল্প থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে। অন্যদিকে নদ-নদীগুলোতেও নৌ যাতায়াতে আগের সেই পরিস্থিতি নেই। নৌকা পারাপারেও আছে ঝুঁকি। ফলে অনেক এলাকায় সেতু না থাকার মানে চরম দুর্ভোগ। সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও সাড়া না পেয়ে নিজেরাই কাঠের সেতু বানিয়ে ফেলেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপার দুটি গ্রামের বাসিন্দারা। বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গলাচিপার উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রাম ও সদর উপজেলার চর মৈষাদি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কলাগাছিয়া শাখা নদী। নদীটি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের। শাখা নদীর পূর্ব পাড়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলাগাছিয়া ইউপি কার্যালয়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, একটি দাখিল মাদ্রাসা ও একটি কলেজ।
এ ছাড়া কলাগাছিয়া গ্রামে বড় সাপ্তাহিক হাট বসে। চর মৈষাদি গ্রামের মানুষেরা কাছাকাছি হওয়ায় কলাগাছিয়াতেই আসেন। ফলে চর মৈষাদি গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী ও মানুষকে প্রতিদিন শাখা নদীর পার হয়ে যাতায়াত করতে হতো। ডিঙিনৌকাই ছিল পারাপারের একমাত্র সম্বল, যা ছিল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
ওই এলাকায় একটি সেতুর জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেন গ্রামবাসী। কোনো আবেদনে কাজ না হওয়ায় তখন নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধানে নেমে পড়েন। নদীর ওপর তৈরি করেন একটি বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী নিজেরাই মেরামত করে সাঁকোটি চলাচলের উপযোগী করে রাখেন। তিন মাস আগে নড়বড়ে সাঁকোটি হেলে পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের মানুষদের কমপক্ষে তিন মাইল ঘুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাটবাজারে যাতায়াত করতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছিল।
কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নজরে আনেন। তখন ইউএনও তাঁকে একটি কাঠের সেতু স্থাপনের পরামর্শ দেন এবং কিছু অর্থ বরাদ্দ দেন। এরপর স্থানীয় মানুষ প্রায় দুই মাস চেষ্টা করে ৩০০ ফুট দীর্ঘ এবং ৪ ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেন। সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকার মতো। সেতুটির মাধ্যমে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে যোগাযোগের সেতুবন্ধ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে এ সেতু।
আমরা গলাচিপায় এ দুই গ্রামের মানুষের জনজীবন সহজ করতে ভূমিকা রাখায় ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলামকে সাধুবাদ জানাই। একজন জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব তিনি যথার্থই পালন করেছেন। একই সঙ্গে এ কাজে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও অভিবাদন জানাই।