অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

দেশের পরিবেশ ও বন রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারা পরিবেশ ধ্বংস করছে, নদী দখল করছে, অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছে—তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এমনটি হওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই সেসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। স্থানীয় প্রভাব ও ক্ষমতাচর্চার মাধ্যমে নিজেরাই হয়ে উঠছেন প্রকৃতি ও পরিবেশের হন্তারক। যেমনটি আমরা দেখছি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় চুনতির সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশের এক এলাকায়।

সেখানে বড় একটি সরকারি টিলার সহস্রাধিক গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেছেন স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবে পরিবেশ ও আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অভিযুক্ত আবুল কালাম উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সঙ্গে লাগানো টিলাটি হাতিসহ বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। সেখানে অন্তত ১ হাজার ৫০০টি আকাশমণিগাছ ছিল।

এর মধ্যে অন্তত ১ হাজার ২০০টি গাছ কেটে ফেলেন ইউপি সদস্য আবুল কালাম। পরে সেগুলো স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেন। এক মাস আগে কাটা হলেও গাছের গোড়া এখনো রয়ে গেছে। গাছ কাটার পর আগুন দেওয়া হয়, যে কারণে টিলাজুড়েই দেখা গেছে ছাই। এতগুলো গাছ কেটে ফেলা হলো, অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রশাসনকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলেও কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করা হয়নি। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। তবে চুনতি রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখেন টিলাটি তাঁদের অধীনে পড়েনি। সেটি সরকারি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে তখন উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরও প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা আমরা দেখতে পাই।

গাছ কাটার ফলে টিলাটিতে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। এতে হাতির হামলায় যেমন স্থানীয় ব্যক্তিরা হতাহতের শিকার হচ্ছেন, প্রাণ হারাতে হচ্ছে হাতিকেও।

গাছ কাটার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ। কিন্তু এক মাস ধরে সেটি করা হয়নি কেন, তা আমাদের জিজ্ঞাসা।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দখলদারদের কারণে চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এমনিতেই হুমকির মুখে পড়েছে, সেখানে এর আশপাশের এলাকাগুলোর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দায়িত্বশীল হোন।