আবু হানিফার উদ্যোগ ও কার্যক্রম প্রশংসনীয়

সম্পাদকীয়

সমৃদ্ধ কৃষি অঞ্চল হিসেবে একসময় এ ভূখণ্ডের সুপরিচিতি ছিল। এখানকার অর্থনীতিও ছিল কৃষিভিত্তিক। সময়ের পরিক্রমায় পুঁজির বিকাশ ও শিল্পায়নের কারণে সেই কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এখন ম্রিয়মাণ। কৃষি ও কৃষকের গুরুত্ব হয়ে গেছে সংকুচিত। হারিয়ে গেছে অনেক কৃষি ফসলের বীজ। বিশেষ করে শত শত ধানবীজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অঞ্চল থেকে। সেসব ধানবীজ রক্ষার চেষ্টা দুরূহই বলা যায়। এরপরও কেউ কেউ সেই কঠিন কাজটি করে যান। তাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার একজন তরুণ আবু হানিফা।

মুক্তাগাছা উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের পারুলীতলা গ্রামের এই তরুণ ইতিমধ্যে মাঠে ২৫ জাতের ধানবীজ উৎপাদন করছেন। উচ্চফলনশীল জাতের ধানের আবাদে যখন স্থানীয় জাতের বিভিন্ন ধান বিলুপ্তির পথে, তখন হারানো ধানবীজ সংরক্ষণ ও উৎপাদন করে রাসায়নিকমুক্ত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন আবু হানিফা। তাঁর উদ্যোগ ও কার্যক্রম নিঃসন্দেহে খুবই প্রশংসনীয়।

সমাজের অন্য অনেক তরুণের মতো আবু হানিফার জীবনটা নির্ঝঞ্ঝাট ছিল না। শিশুকালে বাবাকে হারান তিনি। অভাবের সংসারের ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাজারে কেরোসিন বিক্রি করেছেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সামান্য টাকার মজুরিতে একটি ধানবীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। ধান লাগানো, নিড়ানি দেওয়া, পরিচর্যা ও ফসল তোলা—সবই করতেন। এর মধ্যেও তিনি পড়ালেখা ছাড়েননি। ২০১৭ সালে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে। সেই কোর্স শেষে ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে নিজেই বীজ উৎপাদন শুরু করেন। এককথায় বলতে গেলে অল্প বয়সেই একটি সংগ্রামী জীবন পাড়ি দিয়েছেন আবু হানিফা।

 ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ শুধু বীজ উৎপাদনই করছেন না, হারানো ধানের একটি সংগ্রহশালাও গড়ে তুলেছেন। তিনি মনে করেন, কৃষকেরা বিলুপ্ত জাতের ধান চাষ করলে সার ও কীটনাশক কম লাগবে। এতে কৃষক ও দেশ-দুই-ই উপকৃত হবে। যদিও পুরোনো ধানের বীজ উৎপাদন করে এখনো লাভের মুখ দেখেননি তিনি। কারণ, স্থানীয় বাজারে এসব বীজের চাহিদা এখন খুবই কম। এরপরও সেসব ধানের উৎপাদন আবারও ফিরিয়ে আনতে বিনা মূল্যে কৃষকদের বীজ দিয়েছেন তিনি। আবু হানিফা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে মানুষ এ বীজগুলো সম্পর্কে জানবে। অনেকের আগ্রহ তৈরি হবে।

ধান–গবেষকেরা বলছেন, হানিফার মতো এমন কার্যক্রম অন্যান্য এলাকায়ও করা উচিত। কৃষি বিভাগ বলছে, হানিফার উদ্ভাবন সম্প্রসারিত হলে ধান উৎপাদনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আরও অনেককে কৃষিতে আগ্রহী করে তুলবে। আবু হানিফার মতো তরুণেরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেন। কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে তাঁর মতো আরও তরুণ এগিয়ে আসবেন, সেটিই প্রত্যাশা।