সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করুক

সম্পাদকীয়

আজ বিজয়া দশমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ভিন্ন ভিন্ন নামে এটি উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে।

পুরাণমতে, ‘দুর্গম’ নামে এক অসুর ছিলেন; যিনি জীবজগতে দুর্গতি সৃষ্টি করতেন। যে দেবী সেই দুর্গম অসুরকে বধ করে দেবতাদের হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, তিনিই দুর্গা নামে অভিষিক্ত। ভারতবর্ষে বাঙালি হিন্দুরা দুর্গাকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী হিসেবেও গণ্য করেন।

কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে জানা যায় যে রামচন্দ্র রাবণবধের জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। তখন থেকে এর নাম অকালবোধন বা শারদীয় দুর্গাপূজা। শুক্লা-ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন হয় এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে (মহানবমী) পূজা দিয়ে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেন রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ, মতান্তরে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়।

দুর্গা দেবীর মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দুমানসে আজও সমুজ্জ্বল। তিনি শুধু সৌন্দর্য-মমতা সৃজনের আধারই নন, অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয়স্থল। তাঁর এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার।

শক্তি ও মমতার এ দুই গুণেই তিনি দেবকুলের কাছে পরম পূজনীয়। মানবকুলের জন্য তিনি বহন করে আনেন মঙ্গলর্বাতা। এবার দুর্গা এসেছিলেন হাতিতে চড়ে, যাবেন নৌকায়।

শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু আরাধনার উপলক্ষ নয়, আনন্দ-মিলনের সুযোগও। সেই আনন্দ ধর্ম-সম্প্রদায়ের গণ্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। দুর্গোৎসব তাই হয়ে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব। বাংলাদেশে করোনার কারণে ২০২০ সালে সীমিত পরিসরে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

গত বছর নবরূপে উৎসবের আয়োজন করা হলেও কুমিল্লায় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে; যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে শত শত বছর ধরে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছে। এটাই বাংলাদেশের সমাজের ঐতিহ্য ও রীতি।

এই ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যারা সমাজে অশান্তি ও হানাহানি জিইয়ে রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার এ বছর দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে এবার ৩২ হাজার মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। আশা করি নির্বিঘ্নে এ বছর দুর্গোৎসব উদ্‌যাপিত হবে।

সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।