দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা ও ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগজনক বাস্তবতা সামনে এসেছে। বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এসব ভবনের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে।
ক্যাম্পাসের বাসায় থাকার পরিবর্তে শিক্ষকেরা শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে বেশি পছন্দ করছেন। এর ফলে শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমে নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও সঠিক সময়ে প্রশাসনের সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে খালি ভবনগুলো থেকে আর্থিক ক্ষতি এবং ভবনের অবচয়ও ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর যে ঘাটতি বাজেট থাকে, বাসাগুলোতে সবাই থাকলে ওই ভাড়া দিয়েই অনেকাংশে ঘাটতি বাজেট পূরণ করা সম্ভব।
বাসাগুলো ফাঁকা থাকার পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত, ক্যাম্পাসের বাসায় থাকলে বেতনের ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িভাড়া কেটে নেওয়া হয়। এই খরচের তুলনায় শহরের ভাড়া বাসায় থাকা তুলনামূলক সাশ্রয়ী। দ্বিতীয়ত, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে দূরে অবস্থিত। সন্তানদের শিক্ষা ও অন্যান্য সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে শহরের ভেতরে থাকা সহজতর। তৃতীয়ত, বেশির ভাগ আবাসিক ভবন পুরোনো এবং বসবাসের উপযোগী নয়। ফলে শিক্ষকেরা এসব বাসায় থাকতে চান না।
এই পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যখন ৩০-৩৭ শতাংশ বাসা ফাঁকা পড়ে আছে, তখন নতুন ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন নতুন ভবন উঠলে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হবে ঠিকই, কিন্তু তার বিপরীতে এসব ভবন তোলার মূল উদ্দেশ্য মোটেই পূরণ হবে না। সে কারণে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের পরিবর্তে বিদ্যমান ভবনগুলোর সংস্কার আরও বাস্তবসম্মত।
বাসাগুলো আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, বেতন থেকে বাড়িভাড়া কেটে নেওয়ার নীতিমালায় সংস্কার আনতে হবে। বর্তমান হারে কেটে নেওয়া অর্থ শিক্ষকদের জন্য আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। এই ভাড়া কমিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনা হলে শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে বাসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, ভবনগুলোর মান উন্নত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর সংস্কার, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তৃতীয়ত, নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করার আগে খালি বাসাগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের শহরে থাকা বন্ধে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবস্থান বাধ্যতামূলক করা হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সেবা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে থাকা শুধু প্রশাসনিক সুবিধার জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যও জরুরি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থাপনায় অবিলম্বে সংস্কার আনতে হবে।