দেশের অন্যান্য বড় নগরী থেকে চট্টগ্রামের আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই নগরটি ঘেঁষে আছে একটি সমুদ্রসৈকত। নিকটতম দূরত্বের মধ্যে নগরবাসীর বিনোদন ও ঘোরাঘুরির বড় সুযোগই বলা যায় এটিকে। পতেঙ্গায় সেই সমুদ্রসৈকতকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হলেও সেটি কোনোভাবেই পর্যটক বা দর্শনার্থীবান্ধব বলা যায় না। বিদেশি পর্যটক টানা তো দূরের কথা, স্থানীয় মানুষজনই সৈকতটিতে গিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়েন। অবৈধ দোকানপাটে সৈকতটিতে ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। চলছে চাঁদাবাজিও। রাজনৈতিক প্রভাবেই এসব কর্মকাণ্ড চলছে সেখানে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রসৈকতের একেবারে পাড় ঘেঁষে বালুচরে দোকানপাটের চেয়ার–টেবিল বসানো হয়েছে, যার কয়েক ফুট দূরত্বেই সমুদ্র। সৈকতের বালুকাবেলায় শান্তিমতো দাঁড়ানোর বা হাঁটাহাঁটি করার সুযোগই রাখা হয়নি। এ ছাড়া সারি সারি দোকান বসিয়ে সৈকতে ঢোকার মুখও সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে নামতে হয় দোকানের পাশের সরু পথ ধরে। একটি সমুদ্রসৈকতের চিত্র এমন হবে কেন? দুনিয়ার আর কোনো সমুদ্রসৈকতে গিয়ে মানুষ এমন ভোগান্তিতে পড়ে বলে তো মনে হয় না।
সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তালিকাভুক্ত দোকান আছে দেড় শ। দেখা যাচ্ছে, অবৈধভাবে আরও অন্তত ৬০০ দোকান বসানো হয়েছে। দোকানিদের বেচাকেনা করতে দৈনিক ভিত্তিতে দিতে হয় চাঁদা। দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ টাকার চাঁদা তুলছে একটি চক্র, যা বছরে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো। সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সমিতির রসিদে এ চাঁদা তোলা হলেও অভিযোগ আছে এর পেছনে যুক্ত আছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা। যাঁদের কেউ কেউ আবার স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য ও সাবেক একজন সিটি মেয়রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
সৈকত এলাকার শৃঙ্খলা ও তদারকির জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও এর দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ক্ষমতাবলে এ কমিটির প্রধান হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিডিএ, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রশাসনের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রায় দেড় বছর আগে সৈকতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এ ছাড়া সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতিও সব সময় থাকে না। সব মিলিয়ে সৈকত তদারকির চরম অবহেলা চলছে বলা যায়।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, সৈকতে কোনো চাঁদাবাজি বা অবৈধ ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। দোকানিদের জন্যও আলাদা স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং তা হবে সৈকত থেকে দূরে। আমরা তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, পতেঙ্গাকে পর্যটক ও দর্শনার্থীবান্ধব আদর্শ সমুদ্রসৈকত হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি তিনি আন্তরিক হবেন।