সরাসরি ভোটে নির্বাচন হোক

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ‘উইমেন ইন পার্লামেন্ট ২০২২’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জক হলেও নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সংরক্ষিত আসন দিয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ালে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ কমে। এতে প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকে না; দলীয় প্রধানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।

বর্তমানে ৩৫০ আসনের জাতীয় সংসদে নারী সংসদ সদস্য আছেন সরাসরি নির্বাচনে জয়ী ২৩ জন ও সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন। দলগুলোর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে আনুপাতিক হারে নিজ নিজ দলের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের নির্বাচিত করেন।

আইপিইউর প্রতিবেদনে পার্লামেন্টে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের হারের ওপর ভিত্তি করে ১৮৬টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিশ্বের ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭ নম্বরে, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। নারী প্রতিনিধিত্বের দিক দিয়ে এ হার প্রায় ২১ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। বৈশ্বিকভাবে নেপালের অবস্থান ৫৪তম। নেপালের পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষে ২৭৫ জনের মধ্যে নারী ৯১ এবং উচ্চকক্ষে ৫৮ জনের মধ্যে নারী ২২ জন। নিম্নকক্ষে নারীর প্রতিনিধিত্বের হার ৩৩ শতাংশ এবং উচ্চকক্ষে প্রায় ৩৮ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে ১১০তম অবস্থানে থাকা পাকিস্তান আছে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে ও ভুটান চতুর্থ অবস্থানে। ভারতের অবস্থান বিশ্বে ১৪০তম ও দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এটা নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ঘটনা হলেও সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব এখনো এক-চতুর্থাংশের নিচে। অথচ আফ্রিকান দেশ রুয়ান্ডায় নারী প্রতিনিধিত্বের হার যথাক্রমে উচ্চকক্ষে ৩৫ ও নিম্নকক্ষে ৬১ শতাংশ। কিউবায় এ হার ৫৩ শতাংশ, ৫২ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নিকারাগুয়া তৃতীয়, ৫০ শতাংশ নিয়ে মেক্সিকো চতুর্থ, নিউজিল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ৫০ শতাংশ নিয়ে যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে নারী প্রতিনিধিত্ব নেই, সেখানে ইউএইর এ সাফল্য অনন্য। তাহলে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন? মহিলা পরিষদসহ অনেক নারী সংগঠন সংসদে সরাসরি ভোটে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। যদিও নির্বাচিত হওয়ার পর তারা সেসব বেমালুম ভুলে যায়।

ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্দিষ্ট করার বিকল্প প্রস্তাব আছে। এ পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসন নারীর সরাসরি নির্বাচনের জন্য এবং বাকি ২০০ আসন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য রাখা হবে। পাঁচ বছর পর অন্য ১০০টি আসন এবং পরবর্তী মেয়াদে বাকি ১০০ আসনে সরাসরি নারীদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে। ফলে তিন মেয়াদে প্রতিটি আসন একজন নির্বাচিত নারী সদস্য পাবেন।

জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ভবিষ্যতে হয়তো এমন দিন আসবে, যখন সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন হবে না। কবে সেই ভবিষ্যৎ হবে? জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক দলবিধিতে ২০২১ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের কমিটিগুলোতে নারীর প্রতিনিধিত্ব এক-তৃতীয়াংশ করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত কোনো দল সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

অতএব, সংরক্ষিত আসনে নয়, সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।