বিধিমালা চূড়ান্ত হতে কত বছর লাগবে

সম্পাদকীয়

পার্বত্য চুক্তির লক্ষ্য ছিল, সেখানে দুই দশক ধরে চলে আসা সংঘাতের অবসান এবং ভূমিসংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি। ১৯৯৭ সালে সই হওয়া চুক্তির ২৪ বছর পার হলেও সেখানকার ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি ভূমি কমিশন আইন হলেও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সব কাজই থমকে আছে।

গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির বৈঠকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা এতে অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকেও পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সে সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে একটি প্রস্তাব তৈরি করতে বলা হয়েছিল।

গত রোববারের বৈঠকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি। আমাদের জিজ্ঞাসা, নিশ্ছিদ্র পাহারা ও নজরদারি সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিনের মতো সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠল কীভাবে?

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। এরপর বহুবার আইন ও কমিশনের পদাধিকারী বদল হলেও গত ২২ বছরে তারা কাজই শুরু করতে পারেনি। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ ও ভারত থেকে আসা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করার কথা আছে। এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। চুক্তি সইয়ের প্রায় আড়াই দশক পরও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় পাহাড়িদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

গত বছর কমিশন রাঙামাটিতে বৈঠক আহ্বান করেও বসতে পারেনি পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠনের বিরোধিতার কারণে। ইতিমধ্যে কমিশনে প্রায় ২৩ হাজার আবেদন এসেছে দখল হয়ে যাওয়া ভূমি ও ঘরবাড়ি ফেরত পাওয়ার আশায়। অনেক পাহাড়ি ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় আছে। অভিযোগ আছে, যারা পাহাড়িদের ভূমি ও বাড়িঘর দখল করে আছে, তারাই কমিশনকে কাজ করতে দিচ্ছে না।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে চুক্তি সইকারী দুই পক্ষ মুখোমুখি। সরকারের দাবি চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি বলেছে, ভূমি বিরোধসহ চুক্তির মূল ধারাগুলোই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।

তবে চুক্তি পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে তিন পার্বত্য জেলার সরকারি দপ্তরগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে যে তথ্য জানানো হয়, তা ইতিবাচক। কিন্তু এখানেও চুক্তির বরখেলাপ হলো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন করতে না পারা। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে আলাদা ভোটার তালিকা করে পরিষদের নির্বাচন করা হবে।

পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা অবিলম্বে চূড়ান্ত করা হোক। স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দিলে পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।