বকেয়া বিল আদায় ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ নিজেই যে স্বেচ্ছাচারী ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার জবাব কী? মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে বিনা নোটিশে গ্যাস–সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ১১ দিন ধরে শত শত বৈধ গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ বাস্তবতায় সেখানে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা বিক্ষোভ–সংঘাতেরও জন্ম দিয়েছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার বাউশিয়া, ভবেরচর, বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি গ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় বিপদে পড়েন গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। প্রথমে তাঁরা ভেবে নেন কোনো কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরে তাঁরা জানতে পারেন, বকেয়া বিল আদায় এবং অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই সবার গ্যাস–সংযোগ বন্ধ করে দেয়।
এভাবে বিনা নোটিশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় যে অসন্তোষ তৈরি হয়, তা বিক্ষোভে গড়ায়। গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ ২০২৪) বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা গ্যাস–সংযোগ সচলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হন।
যাঁরা সামর্থ্যবান, তাঁরা বিকল্প হিসেবে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে রান্নাসহ গৃহস্থালির অন্যান্য কাজ করছেন। আর যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁরা মাটির চুলায় কোনোভাবে ভাত–ভর্তা রান্না করে দিন পার করছেন। ভোগান্তির পাশাপাশি সবার বাড়তি টাকাপয়সা খরচ হচ্ছে।
এই ‘তুঘলকি কাণ্ডের’ পরও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গজারিয়া উপজেলায় ১২ হাজারের মতো গ্যাস–সংযোগ আছে, যার অধিকাংশই অবৈধ। অনেকে অনেক বছর ধরে বকেয়া বিল পরিশোধ করেন না।
অবৈধ গ্যাস–সংযোগের বিরুদ্ধে তিতাসকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাঁরা বকেয়া বিল দিচ্ছেন না, তাঁদের কাছ থেকে বিল আদায়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সে জন্য সবার ওপরেই গণশাস্তি চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? আয়েশা সিদ্দিকা নামের একজন গ্রাহক যথার্থ প্রশ্নই তুলেছেন, ‘যাঁরা অবৈধ গ্যাস চালাচ্ছেন, তিতাস গ্যাস তাঁদের খুঁজে বের করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুক। আমরা যাঁরা বৈধ গ্রাহক আছি, নিয়মিত বিল দিচ্ছি, তাঁদেরটা কেন বন্ধ করা হলো?’
গজারিয়ার বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ চালু করুন। অবৈধদের ঠেকাতে বৈধ গ্রাহকদের ঘাড়ে শাস্তির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।