প্রাণ ফিরে পাক সাগরদ্বীপ

সম্পাদকীয়

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড মোটামুটি রক্ষা পেলেও বিধ্বস্ত হয়েছে সাগরদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এই দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

এবারের ঘূর্ণিঝড়ে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে ১ হাজার ২০০টির বেশি। দ্বীপের মাঝেরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ার অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে।

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের পর সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের একাংশ টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে অন্যদের রাখা হয়েছিল সেন্ট মার্টিনের আশ্রয়কেন্দ্রে। এ কারণে দ্বীপটির ওপর মোখার তাণ্ডব বয়ে গেলেও কেউ হতাহত হননি। সবাই নিরাপদ ছিলেন।

উৎকণ্ঠার বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড় থেমে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ নিজ ঠিকানায় এসে দেখেন, কারও ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ, কারও ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তাঁদের খাদ্যপণ্য, সহায়সম্পত্তি কিছুই অবশিষ্ট নেই।

এ অবস্থায় সরকারের প্রথম কাজ হবে দুর্গত মানুষগুলোর কাছে খাবার, সুপেয় পানীয়সহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। অন্যদিকে তাঁরা তো বেশি দিন খোলা আকাশের নিচে থাকতে পারবেন না। কালবৈশাখীর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই দরিদ্র ও নিঃস্ব মানুষগুলো যাতে ঘরবাড়ি তৈরি ও মেরামত করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তাও দিতে হবে।

সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভেঙে পড়া গাছপালা সরিয়ে সড়ক চলাচলের উপযোগী করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যের নেতৃত্বে গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপে প্রায় ৫০০টি নারকেলগাছ ভেঙে গেছে। দ্বীপে নারকেলগাছ ছিল প্রায় ৫ হাজার ৭০০টি।

উল্লেখ্য, নারকেলগাছ ও প্রবাল এই সাগরদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। দ্বীপটি ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ বলেও পরিচিত। অতএব, অবিলম্বে ভেঙে যাওয়া গাছগুলোর শূন্যতা পূরণে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোও মেরামত করতে হবে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনকাজে কোনো রকম বিলম্ব না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সজাগ থাকতে হবে।

সেন্ট মার্টিনকে কেবল এর জনসংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না; এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্রও। এখানকার ঘরবাড়ি, রেস্তোরাঁসহ সব স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে পরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মতভাবে। এর আগে যত্রতত্র অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সেন্ট মার্টিনে যত্রতত্র স্থাপনা নিয়ে পরিবেশবিদদের অভিযোগ ও আপত্তি দীর্ঘদিনের। সে ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের পর নতুন করে যাতে কোনো অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন স্থাপনা (বসতবাড়ি, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট) ভবিষ্যতে কেউ যাতে নির্মাণ করতে না পারে, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সজাগ থাকতে হবে।

সেন্ট মার্টিনের ত্রাণ ও পুনর্বাসনকাজ যত দ্রুত হবে, সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাও তত দ্রুত স্বাভাবিক হবে। সেন্ট মার্টিন ঘুরে দাঁড়াক, প্রাণ ফিরে পাক এই সাগরদ্বীপ।