বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ২০ মে থেকে। সামুদ্রিক মাছের সংরক্ষণ ও প্রজননের লক্ষ্যে প্রতিবছর টানা ৬৫ দিনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। ফলে কক্সবাজার, পটুয়াখালীসহ সমুদ্র উপকূলের জেলেদের এ সময় ঘরে বসেই কাটাতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকারি সহায়তা বরাদ্দ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয় এবং এই বরাদ্দ বিতরণ ও বণ্টন নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ফলে এবারও জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই গভীর সাগর থেকে সব ট্রলার ঘাটে ফিরে আসে। এবারও এর ব্যত্যয় হয়নি। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতি জানাচ্ছে, জেলায় মাছ ধরার ছোট-বড় ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ৬০০টি, জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। তবে কক্সবাজার জেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৯৩। আরেক উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতেও একই চিত্র আমরা দেখি। জেলাটিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্তত দেড় লাখ জেলে। তবে নিবন্ধন তালিকায় নাম রয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার জেলের।
এখন সরকারি সহায়তা দেওয়া হয় নিবন্ধিত জেলেদেরই। তাহলে নিবন্ধন তালিকায় বাইরে থেকে যাওয়া জেলেরা এই ৬৫ দিন কীভাবে চলবেন পরিবার নিয়ে? প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার আগমুহূর্তে যে মাছ ধরা পড়ে, তা বিক্রি করে ৬৫ দিনের জন্য সঞ্চয় হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে অনেক দিন মাছই মেলেনি সমুদ্রে। ফলে সঞ্চয়ের আগে অনেকে ইতিমধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
পেটের দায়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে নামারও উপায় নেই তাঁদের। কারণ, নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি সাগরে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড তৎপর থাকবে। ফলে নিবন্ধন তালিকায় জেলেদের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা চাই না নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কোনো জেলে সমুদ্রে নামুক, এর জন্য তাঁকে জেলেও যেতে হোক। এ ছাড়া নিবন্ধিত জেলেরাও যাতে যথাযথভাবে ও সঠিক সময়ে সহায়তা পান, সেটিও নিশ্চিত করা হোক।
নিষেধাজ্ঞার আগে কক্সবাজারের জেলেরা আরেকটি উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ভারতের জেলেরা নিষেধাজ্ঞা শেষ করে অন্তত ৩৭ দিন আগে সাগরে নামবেন। এ সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ঢুকে ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ আছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার সুফল নিয়েও সন্দিহান কক্সবাজারের জেলেরা।
ভারতের নৌযান যেন বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে মাছ ধরতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করতে ১২ মে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন মৎস্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে জেলেরা, দুই দেশের নিষেধাজ্ঞার সময় এক করার দাবি তুলেছেন। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই দাবি পর্যালোচনার জন্য ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।