নড়াইলে যথাযথ উদ্যোগ কাম্য

সম্পাদকীয়

অপেক্ষাকৃত সুলভ ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বহুকাল ধরে আমিষ হিসেবে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর প্রধান পছন্দ মিঠাপানির মাছ। মাছের ওপর নির্ভরতার কারণেই বলা হয়ে থাকে, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি।’

মাছ চাষ, আহরণ ও বিপণনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে অনেক মানুষ। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জন্য রেণু পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, নড়াইলের একমাত্র মৎস্যবীজ (রেণু) উৎপাদন খামারে এক যুগ ধরে রেণুর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

জেলার মৎস্যচাষিদের সুবিধার্থে ১৯৮২ সালে নড়াইল-যশোর মহাসড়কের বউবাজার এলাকায় করা হয় মৎস্যবীজ উৎপাদনকেন্দ্র। দুটি হ্যাচারিতে সাদা এবং একটিতে চিংড়ি মাছের রেণু উৎপাদন হতো।

১৯৮৫-৮৬ সালে মাছের পোনা উৎপাদনে অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পায় প্রতিষ্ঠানটি। শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম ভালোভাবে চালু ছিল। এরপর নানা সমস্যায় কমতে থাকে উৎপাদন। একপর্যায়ে ২০১২ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর তা চালু হয়নি।

জনবলসংকট, সংস্কারের অভাবসহ নানা সমস্যায় রেণুর উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলার মৎস্যচাষিরা। অতি দ্রুত খামারটি চালু করার দাবি করেছেন তাঁরা। খামারের একজন কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, খামারের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। আর পানিস্বল্পতা একটা বড় সমস্যা।

নড়াইলে বর্তমানে ১২ হাজার ১৪১টি মাছের ঘের রয়েছে। নড়াইলে এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে কোনো মৎস্য উৎপাদন খামার গড়ে ওঠেনি। সরকারি একমাত্র মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে খামারি ও ঘেরমালিকদের। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে, রয়েছে পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

নড়াইল মাছ চাষে একটি সম্ভাবনাময় জেলা। মাছ চাষের সঙ্গে এখানকার হাজার হাজার মানুষ জড়িত। অথচ নড়াইলে একটিমাত্র মৎস্য প্রজননকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

এর আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের ১০৮টি উপজেলায় ছোট-বড় ১৪৩টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের। এসব খামার আরও আধুনিকায়ন ও বীজ উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়াতে চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩৭১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। লক্ষণীয় হলো, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের যত উদ্যোগ, যত অর্থের বরাদ্দ দেখা যায়, পরবর্তী অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না।

সাধারণ মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে রেণু পোনা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ কাম্য। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।