জনদুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হওয়ার পর গত রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার পর মানুষও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছে। এতে সড়কে যানবাহনের চাপও বেশি।

অন্যদিকে বিভিন্ন পেশাজীবী ও জনগোষ্ঠী নিজ নিজ দাবিনামা নিয়ে রাস্তায় নামায় রোববার ঢাকা শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবারও ঢাকার চিত্র অনুরূপ ছিল। বরং ঢাকার উপকণ্ঠে বকেয়া মজুরির দাবিতে সড়ক অবরোধ করারও খবর পাওয়া গেছে। ফলে দুদিন ধরে ঢাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

এই ভোগান্তি দূর করার উপায় কী। যানজটের কারণে মানুষ ঘরে বন্দী থাকবে, সেটা হতে পারে না। মানুষ জীবন–জীবিকার জন্য বাইরে যাবেন এবং তাঁদের যাতায়াতও সহজ ও নির্বিঘ্ন করতে হবে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চাকরি স্থায়ীকরণ, দুর্নীতি রোধ, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ইত্যাদি দাবি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রাস্তায় নামেন। রাজধানীর আটটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিভিন্ন দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি ছিল। ফলে অসহনীয় যানজটে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। আগে সড়ক অবরোধ করে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করত। এখন পেশাজীবীরা মাঠে নেমেছেন। কোনো অজুহাতেই রাস্তা অবরোধ করা যাবে না।

বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি ছাড়াও যানজট তৈরির পেছনে আরও দুটি বিষয় ভূমিকা রাখছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন না নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে। বেশ কয়েক দিন পর সরকারের নির্দেশে তাঁরা কাজে ফিরলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন, বলা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা প্রথম দিকে খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে তাঁরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন। এ অবস্থায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরই কাজটি করতে হবে। এখানে দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়ত, ঢাকার যানজট নিরসনে বিগত সরকার মেট্রোরেল তৈরি করেছিল। মেট্রোরেল পুরো ঢাকার যানজট কমাতে না পারলেও বিরাটসংখ্যক মানুষকে স্বস্তি দিয়েছিল। বিশেষ করে অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার গণ–আন্দোলনের এক পর্যায়ে মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে হামলা হলে এ সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স দুই সপ্তাহও হয়নি। এরই মধ্যে তাদের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় কর্মসূচি পালন কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্ন আছে। তাঁদের দাবিদাওয়া ন্যায্য হলেও জনগণের দুর্ভোগ এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করতে হবে। তাঁরা সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলন করেও তাঁদের দাবিদাওয়া জানাতে পারেন।

যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বই প্রধান। তাঁরা যথাযথভাবে সেটি পালন করবেন বলে আশা করি। একই সঙ্গে অবিলম্বে মেট্রোরেল চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। মেট্রোরেল আক্রান্ত হওয়ার সময় বলা হয়েছিল এটি চালু করতে অনেক সময় লাগবে। পরে কারিগরি পরীক্ষার পর কর্তৃপক্ষ গত শনিবার থেকে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারা সেটি কার্যকর করতে পারেনি কর্মীদের অসহযোগিতার কারণে। নিচের স্তরে কর্মীরা বেতন–ভাতা বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ সমস্যার সমাধান করে মেট্রোরেল চালু করবে।

অন্যথায় জনগণের মধ্যে এই ধারণাই তৈরি হবে যে সরকার বদলালেও ভোগান্তি কমে না।