দেশের পূর্বাঞ্চল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। দেড় মাস আগে সেই বন্যায় ফেনী ও কুমিল্লা জেলা নিয়ে দেশজুড়ে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণসহায়তায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে সেই দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কাটা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু দুর্যোগ–পরর্বতী অনেক সংকট এখনো থেকে গেছে দুর্গত এলাকাগুলোতে। দেড় মাস পরও কোনো কোনো এলাকা এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে। সেসব এলাকার ভোগান্তি দূর করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এবারের বন্যায় কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতেই পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় মনোহরগঞ্জের বন্যার পানি এখনো তেমন নামেনি। দেড় মাস পরও উপজেলাটির অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। মনোহরগঞ্জে এখনো ৭০ শতাংশ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে রয়েছে। মনোহরগঞ্জ ছাড়া পাশের লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণের কয়েকটি স্থানেও বানের পানি সেভাবে নামতে না পারায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মূলত জমে থাকা বন্যার পানি রূপ নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতায়। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই উপজেলা থেকে বন্যার পানি দুভাবে নামার কথা। একটি ডাকাতিয়া নদী। বর্তমানে নদীর বেশির ভাগ এলাকা কচুরিপানায় ভর্তি। নদীর প্রধান শাখা খালগুলোরও একই অবস্থা। ডাকাতিয়া নদীর নদনা খালের মুখে নির্মিত স্লুইসগেট এখন গলার কাঁটা হয়ে আছে। দেড় যুগ আগে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গেটটি নির্মাণ করে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরের বছরই সেটি অকেজো হয়ে পড়ে। সেটি আর মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি।
পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, অবাধে নদী, খাল ও জলাশয় দখল-ভরাটের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খাল দখল ও ভরাটের কারণে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় বন্যার পানি দ্রুত নামতে পারছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘আমরা যেখানেই খবর পাচ্ছি, সেখানেই নদী-খালের বাঁধ অপসারণে অভিযান চালাচ্ছি। পানি কেন কমছে না, তা খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’
আমরা আশা করব, স্লুইসগেটটা মেরামত বা সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে পাউবো। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাতেও পানি নামছে না। মাছ চাষের জন্য যাঁরা পানি নামার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, নদী ও খাল ভরাট ও দখলে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর নদী-খাল ও জলাশয় দখলমুক্ত করতে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।