দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত। সেটিই হওয়াটাই স্বাভাবিক। আদিকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটাই এমন, প্রকৃতির কাছে থেকে নৈসর্গিকভাবে হবে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কাজ। আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে তোলা হলেও ক্যাম্পাসের প্রকৃতি–পরিবেশ কতটা রক্ষা পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্যাম্পাসের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই করুণ। বিশেষ করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে খুবই হতাশ হতে হয়। ক্যাম্পাসজুড়ে ময়লা–আবর্জনার কারণে চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় চুয়েট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে আসা উৎকট গন্ধ সয়েই শ্রেণিকক্ষ, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন ও হলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য, ‘হলের সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় আবর্জনার পচা গন্ধে নাক বন্ধ করে হাঁটতে হয়। ক্যাম্পাসের বাইরের কেউ এসে যখন এই চিত্র দেখে, তখন আমরা লজ্জা পাই।’
স্তূপ করে রাখা আবর্জনার একটি অংশ পোড়ানো হয়। হলের পাশে স্তূপ করে রাখা ময়লা–আবর্জনা পোড়ানো হলে আবাসিক শিক্ষার্থীরা ধোঁয়া ও গন্ধে হলের কক্ষে থাকতে পারেন না। ময়লা–আবর্জনার কারণে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ময়লা–আবর্জনা পোড়ানোর কারণে শিক্ষক–শিক্ষার্থী–কর্মচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
বর্জ্য অপসারণের জন্য চার মাস আগে বেশ কিছু ডাস্টবিন কেনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সেগুলোর বসানোর কথা থাকলেও এত দিনেও তা হয়নি। যদিও নিরাপত্তা শাখা এর জন্য জনবলের অভাবের দোহাই দিয়েছে। তারা জানাচ্ছে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসের বর্জ্য পাহাড়তলীর একটি ডাম্পিং এরিয়ায় ফেলার সিদ্ধান্তও হয়েছে। ময়লা অপসারণের জন্য দুটি গাড়িও কেনা হয়েছে। এত কিছু কেনাকাটা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক মো. তারেকুল আলম প্রথম আলোকে জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৭৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করা হবে। এর জন্য জায়গা নির্ধারণ এবং এর নকশা প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে।
আমরা আশা করব, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তার আগে ক্যাম্পাসের সব জায়গায় ডাস্টবিন বসানো হোক। গাড়ি করে সেগুলো সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাম্পিং এরিয়ায় ফেলার কাজটি নিয়মিত হোক। দেশের একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়েট হোক একটি পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস, সেটিই আমাদের কামনা।