পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কেন পরিবেশবিধ্বংসী হবে

সম্পাদকীয়

জলাশয়কে অব্যবহারযোগ্য করে ফেলতে পারলেই সেটি ভরাট বা দখল করা সহজ হয়ে যায়। আর এভাবে হারিয়ে যায় আমাদের জেলা–উপজেলা শহরগুলোর অনেক পুকুর। আইন অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাটেও বিধিনিষেধ আছে। ফলে সরকারি পুকুরগুলো আরও বেশি সুরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু সেটিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটছে না। যেমনটি আমরা দেখছি হবিগঞ্জ শহরে। সেখানে সরকারি পুকুর ভরাট করে মার্কেট তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে সেখানকার নাগরিক সোচ্চার হয়েছে।

হবিগঞ্জ শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের সামনে পৌরসভার প্রায় এক একর আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। যদিও আগের পৌর মেয়রের আমল থেকে পুকুরটির কোনো যত্ন নেওয়া হয়নি। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে সেটি ব্যবহৃত অনুপযোগী বানিয়ে ফেলা হয়। পুকুরের পূর্ব পাড়ে পুরোনো কাপড় বেচাকেনার টিনের একচালা একটি মার্কেট ছিল। সম্প্রতি পৌরসভা এ মার্কেট অপসারণ করে এবং পুকুরের চারপাশ টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও দেয়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে পুকুর ভরাট করেই সেখানে হবে বহুতল মার্কেট। এ জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটও ঘোষণা করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

পুকুর ভরাট ও সেখানে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত সোমবার এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। তাঁরা চান পুকুরটি খনন করে এর চারপাশে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা হোক। পুকুরের চারপাশে হাঁটার রাস্তা করার যথেষ্ট জায়গা ও সুযোগ উভয়ই আছে। তাঁরা তাঁদের দাবি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

একসময় হবিগঞ্জকে বলা হতো পুকুরের শহর। সেই ঐতিহ্য এখন নেই। শহরটি থেকে একের পর এক পুকুর হারিয়ে গেছে। চন্দ্রনাথ পুকুর নামে আরও একটি জলাশয় একইভাবে ভরাট করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। টাউন হল রোডের টাউন মসজিদের সামনের পুকুরটির অর্ধেক ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে পুকুরগুলোর সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পৌরসভা কর্তৃপক্ষের, অথচ তারাই সেগুলো ভরাট করে ফেলছে। পরিবেশ ধ্বংস করে মার্কেট তোলাকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছে। তাদের এই বাণিজ্যিকী মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

পুকুর বা জলাশয় কমে যাওয়া বড় শহরগুলোর জন্য এখন বড় সংকট তৈরি করেছে। তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা, অগ্নিকাণ্ডে পানি সরবরাহ করা, ব্যবহার্য পানির জোগান দেওয়া ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুকুর বা জলাশয়ের গুরুত্ব অত্যধিক। আমরা আশা করব, হবিগঞ্জ কর্তৃপক্ষ তাদের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। পুকুর বা জলাশয় রক্ষায় সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।