দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিকেরা অন্যতম। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকার থেকেও তঁারা অনেক পিছিয়ে। তাঁদের মূল জনগোষ্ঠীর কাতারে নিয়ে আসতে এ দুই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। সরকারের পাশাপাশি চা-বাগান কর্তৃপক্ষেরও এখানে বড় দায়িত্ব আছে। সেই বিবেচনায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ একটি স্কুল ভবন তৈরি করছিল। কিন্তু সেখানে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা, যা খুবই নিন্দনীয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চাঁদপুর-বেলগাঁও নামে চা-বাগানটির অবস্থান। সাড়ে তিন হাজার একর জায়গায় গড়ে তোলা চা-বাগানে ৭০০ চা-শ্রমিকসহ প্রায় দেড় হাজার লোকের বসবাস। আর এসব শ্রমিক ও আশপাশের এলাকার শিশুদের পড়াশোনার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এ বিদ্যালয়ের প্রাক্-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো টিনশেড ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হওয়ায় ২১ সেপ্টেম্বর একটি সেমি পাকা টিনশেড ভবনের কাজ শুরু করে বাগান কর্তৃপক্ষ।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর চা–বাগানটিতে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে ৯-১০ জন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে বলে। একই দিন বিকেলে ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী লোক নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় চা-বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। বাঁশখালী থানা এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
স্থানীয় পুকুরিয়া ইউপির সদস্য মো. ফারুক বলেন, ‘ঘটনার দিন ছাত্র-জনতা খেলার মাঠে ভবন করায় উত্তেজিত হয়ে পড়লে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ আমাকে ডাকে এবং আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমরা কেউ চা-বাগানের স্কুল ভবনের দেয়াল ভাঙার সঙ্গে জড়িত নই।’ চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চা-বাগান, স্কুল ও খেলার মাঠ চা-বাগানের মালিকানার। তারপরও খেলার মাঠের ক্ষতি না হয়, এমনভাবে মাঠের এক পাশে একটি ভবন করা হচ্ছিল স্কুলের জন্য। মাঠটি অনেক বড় হলেও লোকজন অসদুদ্দেশ্যে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের দেয়াল গুঁড়িয়ে দেয় এবং কাজে বাধা দেয়। এতে করে চা-বাগানের দরিদ্র ও নিরীহ শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা ভয়ে আর বিদ্যালয়ে যেতে চাইছে না। এমনকি চা-বাগানে বসবাসরত চা-শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
দিনে প্রকাশ্যে হুমকি ও ভাঙচুরকারীদের চিহ্নিত করা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমরা আশা করব, দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই, তারা সামাজিক মহলকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে স্কুল তৈরির সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে। চা-বাগানের সন্তানদের শিক্ষা কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হোক, তা আমরা চাই না।