এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে আবহাওয়া ভ্রমণের অনুকূল ছিল না। প্রচণ্ড গরম। মার্চের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ভিড় কম থাকবে। কিন্তু স্বস্তির খবর হলো, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে মানুষ পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ছুটেছেন একটু স্বস্তি ও শান্তির আশায়। শহরে নিত্যদিনের কাজে তাঁরা হয়ে পড়েছিলেন ক্লান্ত।
কক্সবাজার থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধি আব্দুল কুদ্দুসের পাঠানো খবরে বলা হয়, গত শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে আসতে শুরু করেন হাজার হাজার পর্যটক। বাস-ট্রেন, এমনকি বিমানেও এসেছেন পর্যটকেরা। রমজান মাসজুড়ে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকসংখ্যা কম থাকলেও গত রোববার থেকে পা ফেলার জায়গা নেই। এই ভিড় আরও কয়েক দিন থাকবে। এবারে ঈদের লম্বা ছুটির সুযোগটিই নিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
হোটেলমালিকেরা জানান, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ দিনে ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটক টানতে রোজার মাসে হোটেলকক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন শতভাগ ভাড়া দিয়ে হোটেলে থাকতে হচ্ছে।
কেবল কক্সবাজার নয়, তিন পাহাড়ি জেলা সদর ও অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের হোটেল-মোটেলগুলোয় ৬০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩ তারিখ থেকে শতভাগ বুকিং রয়েছে।’ সিলেটে ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক আশা করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। সিলেট অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র হলো জাফলং, সাদাপাথর, লালাখাল, শ্রীপুর, রাতারগুল, পান্তুমাই, মায়াবতী ঝরনা, জৈন্তিয়া রাজবাড়ি, ডিবির হাওর, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া, মাধবকুণ্ড, চেরাপুঞ্জি প্রভৃতি। পর্যটকদের একটা বড় অংশ এ সময় সুন্দরবনেও বেড়াতে যায়।
অন্যান্য বছর পর্যটকদের একটা বড় অংশ প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটান যেত। কিন্তু ভারত সরকার ভিসার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় তাঁদের বড় অংশ দেশের প্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোই বেছে নিয়েছে। নেপাল ও ভুটানেও সীমিতসংখ্যক পর্যটক যাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ স্বদেশমুখী হয়েছেন। এটা দেশের অর্থনীতি ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়।
প্রতিবেশী ভারত, নেপালসহ যেসব দেশে পর্যটনশিল্প বিকশিত হয়েছে, সেসব দেশে ট্যুর অপারেটর বা ভ্রমণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। তুলনায় বাংলাদেশে ট্যুর অপারেটরের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ পর্যটক পারিবারিকভাবে বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকেন, যেখানে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকে। ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে ভ্রমণ করলে খরচ ও ঝুঁকি দুটোই কম। সরকার প্রণীত ২০২১ সালের আইন ও ২০২৪ সালের বিধিমালা ট্যুর অপারেটরদের স্বার্থের পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন এই শিল্পের অংশীজনেরা। তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই ব্যবসাকে মনোপলি করার লক্ষ্যে নিবন্ধন ফি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিন লাখ টাকা জমানত রাখার যে বিধান চালু করা হয়েছে, তা–ও ছোট অপারেটরদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এ কারণে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ট্যুর অপারেটরদের পক্ষ থেকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ২০ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি ও ৫ হাজার টাকা নবায়ন ফি নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।
সে ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে পর্যটন বাড়লে এই খাতে অনেকের কর্মসংস্থান হতে পারে। সরকার বিষয়টির প্রতি নজর দেবে আশা করি।