রেলওয়ের জমি মানেই যেন পরিত্যক্ত সম্পত্তি—যার যেমন ইচ্ছা দখল করে নাও। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারে তেমন কার্যকর প্রচেষ্টা দেখা যায় না বললেই চলে। কোথাও কোনো জমি দখলমুক্ত হলে তো অন্য কোথাও আরও বেশি জমি দখল হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দখলমুক্ত জমি হাতছাড়া হয়ে যেতেও বেশি দেরি হয় না। এ এক আজব কারখানা! ফলে রেলের জমির ওপর সবারই লোভ।
এই দখলদারিতে কারও কিছু যায় আসে না। সে জন্য রেলের জমি দখলদার খাতায় নাম লেখাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন। শুধু তা-ই নয়, সেই জমি দখল করে সেখানে পিকনিক স্পট তৈরি করছেন তিনি। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ক্ষমতাচর্চার ‘অপূর্ব মেলবন্ধন’ বলা যায় যাকে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মোক্তার হোসেন উপজেলার পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি। যদিও তিনি নিজেকে রেলওয়ের ঠিকাদার ও পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। রেলের জমি দখলে তিনি যে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন, তাতে তাঁকে বাহবা দিতেই হয়। প্রথমে সেই জমিতে ছোট একটি কফিশপ বসান। এরপর সেখানে এখন পাকা স্থাপনা তৈরি করছেন। ছোট কফিশপটি হয়ে যাচ্ছে বিশাল এক পিকনিক স্পট।
এ ব্যাপারে মোক্তার হোসেনের বক্তব্য বেশ চমকপ্রদই বলা যায়। তাঁর ভাষ্য, প্রতিদিন শত শত মানুষ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে আসেন। তাঁদের বসার জায়গা করে দিতে, শৌচাগার ও হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিতে জনস্বার্থে পিকনিক স্পটটি তৈরি করছেন তিনি। এর জন্য কিন্তু রেলওয়ের অনুমতিও নেননি এই ‘মানবদরদি’ যুবলীগ নেতা। তিনি যেহেতু বর্তমানে কমিটিতে নেই, তাই তঁার এমন দখলদারির দায় নিতে চায় না ইউনিয়ন যুবলীগ। কথা হচ্ছে, কমিটিতে থাকলেও কি এমন অপকর্মের দায় তাঁরা নিতেন? আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নির্মাণাধীন পিকনিক স্পটের মাত্র ১০০ গজ দূরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে। দখলের বিষয়টি দেখে পুলিশও কিছু বলেনি।
এখন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণের প্রশ্নই আসে না। সেখানে পিকনিক স্পট তৈরির বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁরা কী ব্যবস্থা নেন, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।