জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় যেসব হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার দায় কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা এড়াতে পারেন না। তাঁরা অনেক স্থানে বিনা উসকানিতে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছেন, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদই তার প্রমাণ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে কাজ করতে হয় আইনের অধীনে থেকে। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যই মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন। এ কারণে পুলিশকে গণরোষেরও শিকার হতে হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও গরহাজির থেকেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। এর মধ্যে ডিআইজি থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদের ১৬ জন, ৫ জন পুলিশ পরিদর্শক, উপপরিদর্শক (এসআই) পদের ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন। কিন্তু প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, প্রকৃত অনুপস্থিতির সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়ে নানা অজুহাতে ছুটি নিয়েছেন। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে বিদেশে গেছেন। ইতিমধ্যে সাবেক দুই আইজিপি আবদুল্লাহ আল–মামুন, এ কে এম শহীদুল হকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার চাকরির অবসান ঘটানো হয়েছে।
এ অবস্থায় পুলিশ বিভাগে অস্থিরতা ও সদস্যদের মধ্যে ভয়ভীতি দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জন্য এটা মোটেই কাম্য নয়। আইনের চোখে কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের জন্য নির্ভয় ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের মামলা হলেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করতে হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব পুলিশ ইউনিটকে জানানো হয়েছিল, যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তে কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে অভিযুক্তের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে হবে।
কেবল পুলিশ সদস্য নয়, সাধারণ নাগরিক বা পেশাজীবীর বিরুদ্ধেও অনেক ঢালাও মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রতিটি মামলা খতিয়ে দেখে যাঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাঁদের সবার নামই অভিযুক্তের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। কোনো কোনো হত্যা মামলায় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এটা কোনোভাবে স্বাভাবিক নয়। মামলার উদ্দেশ্য হতে হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ভয়ভীতি দেখানো নয়। ঢালাও মামলা কেবল নিরীহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে না, ন্যায়বিচারের পথও রুদ্ধ করে।
জননিরাপত্তাতথাআইনেরশাসনপ্রতিষ্ঠারজন্যপুলিশসদস্যদেরমধ্যেআস্থাফিরিয়েআনাজরুরি।পুলিশসদস্যরাযাতেভয়হীনপরিবেশেকাজকরতেপারেন, সেইউদ্যোগনিতেহবে।