ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের একটি বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ের অতিবৃষ্টি, মাত্রাতিরিক্ত গরম ও ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার অন্যতম পথ হচ্ছে সবুজায়ন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা ও মনোযোগের ঘাটতি এবং আইন অমান্যের প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেশি। ফলে বনভূমি মানেই সেটা উজাড় করে দখলে নেওয়ার মতো অপরাধ একটা স্বাভাবিক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গাজীপুরে বনের জমি দখল ও সেই জমি নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দুই মাসে দখল হয়েছে বনের সাড়ে ৭ হাজার একর জমি। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার একর জমির বন উজাড় করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, দুই মাসে যদি সাড়ে ৭ হাজার একর বনভূমি দখল হয়, তাহলে এ গতিতে দখল অব্যাহত থাকলে গাজীপুরের বন উজাড় হতে কত দিন সময় লাগবে? ভূমিদস্যুরা এতটাই বেপরোয়া যে বন বিভাগের কর্মীরা একাধিকবার তাঁদের বাধা দিলেও অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকেননি তাঁরা। বন বিভাগের লোকজন অবৈধ এসব স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিতে গিয়ে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।

বনের জমি দখলের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকেন। দখল করা জমিতে কেউ মার্কেট বানাচ্ছেন, কেউ বাড়িঘর বানাচ্ছেন, কেউ–বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। গত দুই মাসে এসব দখলদারের বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আসামি না ধরায় ভূমিদস্যুরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।

২০০০ সালের জরিপে, গাজীপুর জেলায় বনভূমির পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৯৪৩ হেক্টর বা ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে বনভূমির পরিমাণ এসে দাঁড়ায় মাত্র ১৬ হাজার ১৭৪ হেক্টর বা ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত দুই মাসে সাড়ে ৭ হাজার একর বনভূমি দখল হলে, এখন বনের পরিমাণ কোথায় এসে দাঁড়াল? একটি বনভূমিসমৃদ্ধ জেলার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে বাকি দেশের পরিস্থিতি কী, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। কাগজে-কলমের হিসাবের বাইরে বাংলাদেশের মোট আয়তনের কতভাগ বনভূমি অবশিষ্ট আছে?

দুই মাসে সাড়ে ৭ হাজার একর জমি দখল হলেও যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাত্র ৬ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। এটাকে পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া আর কী বলার আছে। ভূমিদস্যুদের কবল থেকে যেকোনো মূল্যে বনের জমি উদ্ধার করতে হবে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন।