প্রক্রিয়াজাতকরণ আরও উন্নত করতে হবে

সম্পাদকীয়

গত কয়েক বছরের মতো এবারও পশুর চামড়ার দাম পাননি বলে অভিযোগ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাঁদের এ অভিযোগ অমূলক নয়। এ বছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে তা ৪৫-৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। বাস্তবতা হলো সরকার নির্ধারিত দরের অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতি হিসাবে নিলে সরকার নির্ধারিত দামও গত বছরের তুলনায় বাড়েনি।

উদ্বেগজনক খবর হলো বাংলাদেশের লেদার কারখানাগুলো অনেক বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে পাকা চামড়া আমদানি করে থাকে তাদের চাহিদা মেটাতে। অন্যদিকে দেশের চামড়া হয় পচে যায় কিংবা পানির দামে বিক্রি করতে হয়। এবার দাম না পেয়ে মাটির নিচে চামড়া পুঁতে রাখার খবর পাওয়া যায়নি, এটুকুই সান্ত্বনা। এ বছর এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছে।

দেশে বছরে যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। এই বিপুল পরিমাণ চামড়া পরিবেশসম্মতভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত করার জন্য যে সক্ষমতা ও দক্ষতা দরকার, সেটা আমাদের নেই। সক্ষমতা অর্জনের তেমন চেষ্টাও করা হয়নি। একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছেন সবাই।

বিশ্বজুড়ে চামড়ার ৩০০-৪০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ যদি এর ১ শতাংশও ধরতে পারে, তাহলে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলারের চামড়া রপ্তানি হওয়ার কথা। চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত না করার কারণে আন্তর্জাতিক বড় যেসব ব্র্যান্ড আমাদের এখান থেকে চামড়াজাত পণ্য কেনে, তারা বাইরে থেকে চামড়া আমদানির শর্ত আরোপ করে। তথ্যমতে, ২০২০-২১ সালে সম্ভবত ১১১ মিলিয়ন ডলারের চামড়া আমদানি হয়েছে। প্রতিবছরই আমদানির পরিমাণ ১০-১২ শতাংশ হারে বাড়ছে।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মান উন্নয়নে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকায় যে চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তার মান নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথা নেই।

আবার ব্যবসায়ী তথা আড়তদারেরা সেকেলে পদ্ধতিতেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন, যা আন্তর্জাতিক বাজার দূরের কথা, দেশীয় বাজারও ধরতে পারে না। লেদার কারখানাগুলোর অবস্থাও খুব ভালো বলা যাবে না। চামড়া প্রস্তুতের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদপ্রাপ্ত মাত্র চারটি লেদার ফ্যাক্টরি রয়েছে।

কেন এমনটি হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। এটা কি স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষণ? চামড়ার বাণিজ্য চামড়াশিল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের বিদেশে প্রচুর চাহিদা আছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসাও করছে। তাহলে চামড়াশিল্প কেন বেহাল থাকবে?

এ অবস্থায় দেশীয় চামড়ার বাজার ধরে রাখতে এর সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণকে উন্নত করার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে চামড়া ব্যবসায়ী ও চামড়াশিল্পের মালিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান বের করতে হবে।

প্রতিবছরই কোরবানির সময় চামড়ার দাম নিয়ে হইচই হয়। কোরবানি চলে যাওয়ার পর যেন সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে না যায়, সে জন্য টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের চামড়াশিল্প ও কাঁচামাল দুটোরই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।