শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রেল খাতের উন্নয়নে অপরিকল্পিতভাবে যে বিপুল অর্থ খরচ করা হয়েছে, তা নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়েছে। একের পর এক রেললাইন তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু যে পরিমাণ ট্রেন চলার কথা ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে রেললাইন নির্মাণের সুফল সেই অর্থে মানুষ পায়নি। অন্যদিকে আগে থেকে যে রেললাইন চালু আছে, সেখানে ট্রেনের শিডিউল বা সময়সূচিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। রেলপথের সংস্কারসহ নানা কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় কাজ এখন রেলের সময়সূচিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোর গন্তব্যে পৌঁছাতেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বেশি লাগছে। এতে যাত্রীদের যেমন বাড়তি সময় লাগছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন বিলম্ব হলে যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না রেল কর্তৃপক্ষকে। তবে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে এখন ভাবছে। ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
টঙ্গী-ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনসহ কিছু সেকশনে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ রয়েছে। সাধারণত তিন মাসের সময়সীমায় গতিবেগ স্বাভাবিকের তুলনায় কমিয়ে রাখা হলে সেটিকে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ বলা হয়। টঙ্গী-ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের বেশ কিছু স্থানে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশের কারণে তিস্তা, অগ্নিবীণা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, মোহনগঞ্জ, বিজয় এক্সপ্রেসের মতো আন্তনগর ট্রেনসহ প্রায় ২০টি ট্রেনের সূচি মেনে চলাচল করা সম্ভব হয় না। রেলপথ ও রেলসেতুর সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগবে। তাই সংশোধন করে নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হবে। তখন যাত্রীদের ট্রেন চলাচলে আর ভোগান্তি থাকবে না, বিভ্রান্তও হতে হবে না।
শুধু পূর্বাঞ্চল নয়, পশ্চিমাঞ্চলেও ট্রেন বিলম্ব নিয়ে যথেষ্ট ভোগান্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে ট্রেন লাইনচ্যুত হলে এ ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। রেলস্টেশনে আসা যাত্রীদের তখন কোনো তথ্য জানানো হয় না। তাঁরা তখন বিভ্রান্ত হয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন। ট্রেন বিলম্বের ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল যোগাযোগের এ যুগে খুব সহজেই সেটি করা যায়। আশা করি, রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সময় মেনে ট্রেন চলাচলসহ সেবার সার্বিক মান বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেলের সূচি বিপর্যয় কমিয়ে আনা, টিকিট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ, রেলের ব্যয় সংকোচন করে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়সহ রেলকে লাভজনক পর্যায়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এখন নির্দেশনাগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়, সেটিই দেখার অপেক্ষা। আমরা আশা করব, একটা সময় রেলযাত্রার প্রতি মানুষের যে আস্থা ছিল, সেটি ফিরে আসবে।