আশার কথা যে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় এসেছে গত মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ২৪০ কোটি ডলার। গত আগস্টে আয় এসেছিল ২২২ কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসীরা ৮০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম কিছুটা বেশি দিতে পারছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ৪১৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে জুলাই মাসে আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। মে মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২৫ কোটি ডলার। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে জুনে, যার পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি ডলার।
সে ক্ষেত্রে এক মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ৮০ শতাংশ হলেও উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। দেখার বিষয়, প্রবৃদ্ধির এই ধারা ধরে রাখা যায় কি না। সম্প্রতি প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকা না ছাপিয়ে ও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে আর্থিক খাতের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। ডলারের বাজার যেভাবে চলছে, এভাবে চললে বাজারে অস্থিরতা থাকবে না। এখন ব্যাংকে প্রবাসী আয়ে ডলারের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, খোলাবাজারে ডলারের দাম তার চেয়ে কম। এতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে।
মানুষ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কথায় তখনই আশ্বস্ত হবে, যখন দেশ থেকে ডলার পাচারের পথগুলো বন্ধ হবে এবং বৈধ পথে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো আরও সহজ হবে। অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে হবে। বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একাধিক চক্র সক্রিয় আছে বলে জানা গেছে। তারা প্রবাসীদের প্রলুব্ধ করে যে তাদের মাধ্যমে টাকা পাঠালে বেশি দাম পাবেন। আসলে তারা প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেয় এবং দেশে তাদের স্বজন ও ব্যবসায়ী শরিকদের মাধ্যমে টাকাটা এখানে শোধ করে। ফলে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়।
রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জন্য নানা সুযোগ–সুবিধা ও প্রণোদনা বাড়ানো দরকার। এতে তাঁরা আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। একই সঙ্গে প্রবাসীদের দেশের ভেতরে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ দিতে হবে। প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত বন্ড বিনিয়োগের সীমা আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে। এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত যাঁরা অতীতে নিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল না। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগের সুযোগ না পেলে বিদেশেই বিনিয়োগ করবেন। আমরা চাই না তেমনটি হোক।