দেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি সবুজ সিলেট ও চট্টগ্রাম। নদী, পাহাড়, টিলাসমৃদ্ধ শহর হওয়ায় সবুজের এই আধিক্য। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে পাহাড়-টিলা কাটা, গাছ কাটা, নদীদূষণ ও দখলের কারণে দিন দিন সবুজের পরিমাণ কমে আসছে। নগরের উন্নয়নে সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতা বা অপ-উন্নয়ন। সিলেট শহরে সিটি করপোরেশন গাছ কেটেই চলেছে। বারবার খবরের শিরোনাম হয়েও কেন বোধোদয় হচ্ছে না সংস্থাটির, সেটিই প্রশ্ন।
সিটি করপোরেশন শহরে হাঁটার রাস্তা বা ফুটপাত তৈরি করবে, নালা-নর্দমা বানাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নানা প্রকল্প নেবে ও বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সেসব করতে গিয়ে পরিবেশের ওপর আঘাত হানা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত হতে পারে না। কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশন কাজটিই করে যাচ্ছে। সর্বশেষ নগরে একটি দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে বা হাঁটার পথ নির্মাণের জন্য ছায়াদানকারী ছোট-বড় কয়েকটি গাছ কেটে ফেলেছে। গাছই যদি না থাকে, সেই পথ কীভাবে দৃষ্টিনন্দন হয়!
সাগরদিঘিরপাড় ছড়ার (প্রাকৃতিক খাল) তীরে হাঁটার পথটি নির্মাণের ক্ষেত্রে গাছ রক্ষা করেই নকশা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী অনেক গাছ রক্ষা করেই প্রথম দফার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরুর পর দেখা গেল নির্মাণাধীন অংশে থাকা গাছগুলোর কথা আর চিন্তাই করা হয়নি। কিছু গাছ কেটে ফেলার পর বিষয়টি খবরের শিরোনাম হয়। এরপর গাছ কাটা বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এলে ওই অংশে বাকি গাছগুলোও হয়তো রেহাই পেত না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন গত দুই দশকে নগর থেকে ছায়াদানকারী শতবর্ষী সহস্রাধিক বৃক্ষ উন্নয়নের নামে উজাড় করেছে। এ অপকর্মের জন্য প্রতিবার আমরা জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে ফেলেছি। প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা গাছ রক্ষা করেই হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একই ঘটনা ঘটল সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ে নির্মাণেও।’ যদিও সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, গাছ অক্ষত রেখেই ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা। কেন গাছ কাটা হচ্ছে, এটা খোঁজ নেওয়া হবে।
শুধু গাছই নয়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে শহরের টিলাও কেটেছে সিটি করপোরেশন, এমন অভিযোগ আছে। শহর দেখভাল করার দায়িত্ব এ সংস্থার। তারা কেন এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে? পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি সংস্থাটির নির্দয় আচরণ বন্ধ হোক। সিলেট শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সিটি করপোরেশন আন্তরিক হবে, সেটিই আমরা প্রত্যাশা করি।