দেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা আদৌ কোনো নাগরিকসেবা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নানা উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়, সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তারও কি খোঁজখবর সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল রাখে? তা না হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নে এ দশা হবে কেন? মানুষের জন্য উন্নয়ন, এখন তা যদি উল্টো দুর্ভোগই বাড়িয়ে দেয়, সেই উন্নয়নের গুরুত্ব কী থাকল। সরকারি প্রকল্পের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও গড়িমসি বারবার সম্পাদকীয়র বিষয় হয়ে উঠছে আমাদের। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, রাজশাহী নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নেওয়া ১৮৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় তিন মাস আগে। অথচ এখনো ছয়টি ওয়ার্ডে উন্নয়নের একটি ইটও লাগেনি। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে এখনো কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের হিসাবমতে, কাজের গড় অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। এ অবস্থায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলছেন, এমনভাবে প্রকল্প করা হয়েছে যে তা বাস্তবায়িত হলে তাঁর ওয়ার্ডে আর কোনো উন্নয়নকাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। জনগণ উন্নত নগরজীবনের সুবিধা ভোগ করবে। অথচ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারেরই দেখা নেই। এখন পর্যন্ত একটি ইটও ফেলা হয়নি।
এর জন্য সিটি মেয়র ও কাউন্সিলররা দুষছেন ঠিকাদারকে। সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, ‘ঠিকাদার আমাদের একটু বিপদে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর বড় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু অলিগলির রাস্তা করার অভিজ্ঞতা নেই।’ তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ পেলেন। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এখানে রাজনৈতিক প্রভাব বা ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয় থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এসব খেয়ালখুশির ফল ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বছরের পর বছর ধরে কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় নগরের অনেক এলাকার অবস্থা বেহাল। বৃষ্টি হলেই নর্দমার পানি ঢুকে যায় ঘরের ভেতরে, নড়বড়ে রাস্তায় গাড়ি চালানোই দায় হয়ে পড়েছে এমনকি বয়স্ক কোনো ব্যক্তিরও ঠিকঠাক হেঁটে চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
জনগণের কথা মাথায় রেখে প্রকল্প নেওয়া হলেও দেখা যায়, সেখানে প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ঠিকাদারদের স্বার্থই প্রধান হয়ে ওঠে। যার কারণে রাজশাহীর প্রকল্পগুলোতে এমন ঠিকাদারের দেখা পাই আমরা। ঠিকাদারের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এই ঠিকাদার কীভাবে এ প্রকল্পের কাজ পেলেন, সেই দায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।