যশোরবাসীর আর কত অপেক্ষা

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি জনপদ যশোর। কয়েক শ বছর আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে স্বীকৃত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ শহর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। বিমানঘাঁটি, স্থলবন্দর ছাড়াও ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ—নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ জেলাটি। ফলে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য এক দশক আগে গড়ে তোলা হয় একটি মেডিকেল কলেজ। তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুবিধার্থে ও জেলার ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সে সময় একটি ৫০০ শয্যার অত্যাধুনিক হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দশক পেরিয়ে গেলেও সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে যশোর মেডিকেল কলেজসহ দেশের চারটি মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব ছিল। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও সই হয়। কিন্তু ভারত সরকার অনাগ্রহী হওয়ায় সম্প্রতি ওই চুক্তি বাতিল হয়েছে। ফলে অত্যাধুনিক হাসপাতালগুলোর ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যশোরের সুধীজনেরা। গত রোববার হাসপাতালের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তাঁরা বলেন, হাসপাতালটি না হওয়ায় কলেজের শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক হাসপাতালে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ থেকে অনেকটা বঞ্চিত হয়েছেন; অন্যদিকে যশোরের লাখ লাখ মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য এই জেলার মানুষকে ঢাকা, খুলনা বা কলকাতায় দৌড়াতে হয়। এ কারণে অবিলম্বে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে। প্রথম আলোর প্রতিনিধি ফোনে জানালেন, মেডিকেল কলেজ থেকে সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির দূরত্ব তিন কিলোমিটার। এতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির তো শেষ নেই, তঁাদের পড়াশোনা ও অনুশীলনও নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বড় ধরনের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে যশোরকে। খুলনা বা ঢাকার ওপর নির্ভর করতে গিয়ে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা রীতিমতো ভেঙে পড়ে। সেই করুণ অভিজ্ঞতাই জেলাটিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণের যৌক্তিকতাকে আরও প্রবল করে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ায় এখন শুধু বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নেই এই হাসপাতাল স্থাপিত হবে। যশোরে অত্যাধুনিক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই প্রস্তাব একনেকে উত্থাপন করা হবে। যশোরে প্রস্তাবিত হাসপাতালটির স্থাপনে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।