মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়

প্রাপ্যের চেয়ে বেশি পাওয়ার অন্যায্য বাসনার নাম লোভ। লোভই জালিয়াতির মূলধন। এই তৃতীয় রিপুটি বিত্তশালীদের ওপর ভর করলে তা যে বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্ষতির কারণ হয়, তার আরও একটি উদাহরণ টাঙ্গাইলের আনারস চাষে দেখা যাচ্ছে। সেখানকার মধুপুর বনাঞ্চলে যুগ যুগ ধরে ক্ষুদ্র গারো সম্প্রদায়ের লোকজন আনারস চাষ করে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করছিলেন। সেখানে এখন এলাকার বাইরের বড় বড় বিনিয়োগকারীর চোখ পড়েছে। তারা সেখানে গিয়ে বৃহৎ পরিসরে আনারস চাষ করছে এবং আনারসকে দ্রুত বড় করতে, পাকাতে ও রং সুন্দর করতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করছে। এতে তাদের পকেটে অতিরিক্ত মুনাফা ঢুকলেও স্থানীয় আদি চাষিরা মার খাচ্ছেন। মাঝখান থেকে মানবদেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর আনারসে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে।

আনারসের চারা রোপণের পর থেকে দ্রুত ফল আসা, ফল বড় করা, দ্রুত পাকানো ও রং আকর্ষণীয় করতে কয়েক ধাপে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত গাছে ৬০টি পাতা হওয়ার পর আনারস ধরে। কিন্তু ২৮টি পাতা হওয়ার পরেই ফল ধরানোর জন্য আনারসে রাইপেন, ইথিপ্লাসসহ ইথোফেন গ্রুপের রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে। ফল আসার পর তা বড় করার জন্য প্লানোফিক্স, সুপারফিক্সসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আনারস পাকানোর জন্য এবং রং আকর্ষণীয় করতে আবার রাইপেন, ইথিপ্লাসসহ ইথোফেন গ্রুপের নানা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে।

দ্রুত ফল ধরা এবং ফল বড় হওয়ার জন্য ১০ লিটার পানিতে ২ থেকে ৩ মিলিলিটার রাসায়নিক ব্যবহারকে সহনীয় মাত্রার বলে ধরা হয়। অতি মুনাফালোভীরা ১০ লিটার পানিতে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার পর্যন্ত রাসায়নিক মিশিয়ে আনারসে ছিটায়। এতে আনারস দ্রুত পেকে যায়, রং সুন্দর হয় এবং একসঙ্গে পুরো জমির আনারস বাজারজাত করা যায়। এই অস্বাভাবিক চাষ পদ্ধতির কারণে সেখানকার আনারস উৎপাদনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে।

বিপুল মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তি দিতে এবং স্বাভাবিক চাষ পদ্ধতি ধরে রাখতে এই অতি লোভের রাশ এখনই টেনে ধরা দরকার। আনারস চাষে কী পরিমাণ বা কোন মাত্রার রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে, তা বিশেষজ্ঞ মতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দেওয়া এবং সেই মাত্রা কেউ লঙ্ঘন করছে কি না, তা কঠোরভাবে দেখভাল করা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই সরকারের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।