প্রাণীর ওপর নিষ্ঠুরতা থামছেই না। পিটিয়ে, বিষপ্রয়োগে কিংবা বিদ্যুতায়িত করে বানর, হাতি, মেছো বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণী হত্যার ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। কিন্তু প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধের বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ নেই। গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৪০টি বানরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিষ মেশানো কলা খাইয়ে বানরগুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাহাড়ি জমিতে কাজ করতে যাওয়ার সময় মহেশখালীতে একটি লাউখেতের পাশে বানরগুলোকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান একজন কৃষক। বানরের আশপাশে পড়ে ছিল বেশ কয়েকটি সাগরকলা। বিষ মেশানো কলা খেয়ে বানরগুলোর মৃত্যু হতে পারে। এলাকার মানুষকে মৃত বানরগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলতে দেখেছেন তিনি।
বড় মহেশখালীর পাহাড় ও জঙ্গলে হাজারো বানরের বসবাস। বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বানরগুলো খাদ্যসংকটে পড়েছে। সে কারণে মাঝেমধ্যে দল বেঁধে সেগুলো হানা দেয় এলাকার খেতে। বন উজাড় করায় শুধু মহেশখালী নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায়ও বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান নষ্ট হচ্ছে। খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে। বানর ও হাতির মতো প্রাণী খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। গণমাধ্যমের সংবাদে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে চট্টগ্রাম বনাঞ্চলে ১৩টি হাতি অস্বাভাবিকভাবে প্রাণ হারিয়েছে।
প্রাণীর বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হলে তারা যাবে কোথায়? অন্যদিকে কৃষকের ফসল নষ্ট হলে সেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বলে বিষপ্রয়োগ কিংবা বিদ্যুতায়িত করে কেন প্রাণী হত্যা করা হবে? বন উজাড় করে, প্রাণী হত্যা করে প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করা হলে শেষ পর্যন্ত মানুষকেই চরম মূল্য দিতে হবে। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা যাতে না হয়, সে জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে ১৯২০ সাল থেকে আইন রয়েছে। ২০১৯ সালে জরিমানা ও সর্বোচ্চ দুই বছরের সাজার বিধান রেখে প্রাণিকল্যাণ বিল পাস হয়েছে। মহেশখালীর ৪০ বানরের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে বন বিভাগ। আমরা চাই তদন্তে যাঁরাই এ নিষ্ঠুর ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণিত হবেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।