পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি আছে, তার ৯৭ শতাংশই লবণাক্ত। মাত্র ৩ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য। এই ৩ শতাংশের তিন ভাগের দুই ভাগের বেশি কঠিন বরফ আকারে হিমবাহ এবং মেরু প্রদেশে জমে আছে। তার মানে মোট পানির ১ শতাংশের কম পানি পানযোগ্য। পানিবিজ্ঞানীদের এ গবেষণালব্ধ তথ্য যে কতখানি বস্তুনিষ্ঠ, তা আমাদের উপকূলীয় জেলাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে। সেখানকার জেলাগুলোকে বড়জোর ‘জলা’ বলা যেতে পারে, কিন্তু সুজলা বলা যাবে না। কারণ, সেখানকার পানি লবণাক্ত এবং বিশুদ্ধ স্বাদুপানির অভাবে মানুষ চরম সংকটে রয়েছে।
খবরে এসেছে, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার অবস্থা শোচনীয়। সেখানে ৪৬টি গ্রামে খাওয়ার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ পানির যন্ত্রনির্ভর যেসব কৃত্রিম উৎস আছে, তার বেশির ভাগই অকেজো হয়ে রয়েছে। বারবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে পাথরঘাটায় ‘পানি বিনে কারবালাতে পড়ে হাহাকার’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বেশি সংকট উপজেলার ২৫টি গ্রামে। এর বাইরে আরও ২১টি গ্রামে মাঝারি মাত্রার সংকট রয়েছে।
পাথরঘাটার তিন দিকে নদী। শুকনো মৌসুমে স্থলভাগে পানির স্তর নেমে যায়। টিউবওয়েলের পানিও লবণাক্ত হওয়ায় তা পান করা যায় না। এই উপজেলায় সৌরশক্তিচালিত যে সাতটি পানির ফিল্টার আছে, তা নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কয়েক হাজার পরিবার লবণাক্ত কিংবা ময়লা পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। খবরে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার জানালেও তারা ফিল্টার মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিশুদ্ধ পানির নাম যদি জীবন হয়, তো লবণাক্ত কিংবা দূষিত পানির আরেক নাম মরণ। জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো এই পানি জনগণকে খেতে হচ্ছে, অথচ সরকারের দিক সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। এটি কোনোভাবে কাম্য নয়।
স্থানীয় মানুষের কথায় বোঝা যাচ্ছে, যে সৌরশক্তিচালিত ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে তা যদি দ্রুত ঠিক করা হয় এবং খাবার পানির আধার হিসেবে ব্যবহার্য কিছু খাসপুকুর খনন করা যায়, তাহলে সুপেয় পানির উৎস বাড়বে। এ ছাড়া এই এলাকায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি দ্রুত ট্যাংক দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। মোদ্দা কথা, দ্রুত সেখানকার মানুষের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত না করা গেলে সেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।