আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। সারা বিশ্বেই ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। যেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবা শরিফে হজব্রত পালন করতেন, সেখানে সৌদি সরকার হজ পালনকারীর সংখ্যা ৬০ হাজার সীমিত করে দিয়েছে। তা-ও বাইরে থেকে কেউ যেতে পারবেন না; সৌদি নাগরিকদের পাশাপাশি সেখানে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকেরা এ সুযোগ পাবেন। তবে শর্ত হলো তাঁদের দুই ডোজ করে টিকা নিতে হবে।
প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি দেওয়া ফরজ। মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে পশু কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য হলো সব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্ব ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রয়াস। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়। তবে তার পরের দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে।
এবার বাংলাদেশে এমন সময়ে ঈদুল আজহা এসেছে, যখন করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সরকারের ভাষায় কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৮ দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। ২৩ জুলাই থেকে ফের ১৪ দিনের বিধিনিষেধেরও আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার। বলা হয়েছে ওই সময় কারখানা, গণপরিবহনসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। একবার বিধিনিষেধ কঠোর করা ও আরেকবার শিথিল করার এ পালাবদল করোনা সংক্রমণ রোধে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানি ও ঈদের নামাজের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা খুব একটা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে গণপরিবহন, মার্কেট ও কোরবানির হাটে মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ভিড় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সামাজিক সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যেতে পারে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপ ছিল মূলত শহরাঞ্চলে, দ্বিতীয় ঢেউ শহর ও গ্রাম সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, যদি আমরা সজাগ না হই।
পৃথিবীর সব দেশেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ কিংবা সব ধরনের অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আরও বেশি জরুরি। এ ব্যাপারে জনগণ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। এবার ঈদের সময় করোনার পাশাপাশি ঢাকা শহরে ডেঙ্গুরও প্রকোপ বাড়ছে। আমাদের সবাইকে যে যাঁর অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, যাঁরা আইন লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সামান্য ভুলে দেশ ও জনগণকে ভয়াবহ বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় না।
তবে এত দুঃসংবাদের মধ্যেও সুখবর হলো টিকা আসছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে টিকাই একমাত্র প্রতিষেধক। যত বেশি মানুষকে আমরা টিকা দিতে পারব, তত বেশি জীবনের ঝুঁকি কমবে। আর জীবনের ঝুঁকি কমলে জীবিকাও নিরাপদ থাকবে। সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা।