পদ্মা সেতুর কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে আনুষ্ঠানিক সূচনার গুরুত্বটা অবশ্যই ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধন করার পর বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের এই শুভসূচনাকে আমরা স্বাগত জানাই।
১৯৯৮-৯৯ সালে এই সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর তারা আবার সেতুটি নির্মাণে উদ্যোগী হয়। ২০১১ সালে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহার সেতুটির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছিল। ২০১৪ সালে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নেয়, তার ধারাবাহিকতাতেই শনিবার সেতুর মূল পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ শুরু হলো।
স্বপ্নের সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাসনিজেদের অর্থে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। তবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প শুধু দেশীয় বা নিজস্ব অর্থায়নের বিবেচনাতেই নয়, বৈশ্বিক বিবেচনাতেও একটি বড় প্রকল্প। এ ধরনের একটি প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, ঠিকাদারদের কাজ পর্যালোচনা ও তদারকি এবং সামগ্রিকভাবে এর ব্যবস্থাপনার কাজটি খুবই জটিল ও কঠিন। সতর্কতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে দেশের অর্থনীতি এবং সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এশিয়া ও এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ, পণ্য পরিবহন, বন্দর সুবিধার পুরোপুরি সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। আমরা আশা করব, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। পরিকল্পনার শুরুতে নির্ধারিত খরচের চেয়ে বর্তমান বাজেট অনেক বেড়ে গেছে। আমরা আশা করব, বর্তমানে নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই কাজটি শেষ করা যাবে।