আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুই ধর্মীয় উৎসবের একটি। ইসলামে যে পাঁচটি অবশ্যপালনীয় বিধান আছে, তার মধ্যে হজ অন্যতম। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য হজ পালন করা ফরজ। হজের অন্যতম অনুষঙ্গ কোরবানি।
প্রতিবছর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে আরাফাত ময়দানে সমবেত হয়ে পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর যথাযথভাবে হজ পালিত হতে পারেনি। স্থানীয়ভাবে খুবই সীমিতসংখ্যক মানুষ হজ পালন করেছেন। এবার করোনার সংক্রমণ কম থাকায় সৗদি সরকার বিদেশিদের জন্য হজ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করতে সৌদি আরব গেছেন।
প্রতিবছর হজযাত্রা নিয়ে নানা রকম সমস্যা হয়। কখনো ফ্লাইট বিড়ম্বনা, কখনো হজ এজেন্সির প্রতারণার কারণে অনেকে পুরো অর্থ পরিশোধ করেও হজ পালন করতে পারেননি। এবার হজযাত্রা মোটামুটি নির্বিঘ্ন হয়েছে। এ জন্য হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করা যায়, হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রাও নিরাপদ হবে।
ঈদ অর্থ আনন্দ। আর কোরবানি হলো ত্যাগ। আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম (আ.)–কে তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এরপর হজরত ইবরাহিম তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানি দেওয়ার
জন্য নিয়ে গেলেন। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেন। তখন আল্লাহর নির্দেশে ইসমাইলের বদলে সেখানে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর এই সুন্নত অনুসারে সেই কোরবানি পরবর্তীকালে মুসলিমদের জন্য ফরজ করে দেওয়া হয়। যাঁরা হজ পালন করছেন, শুধু তাঁরাই নন, প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান কোরবানি দিয়ে থাকেন।
ঈদুল আজহা আমাদের জন্য নিয়ে আসে শান্তি, সৌহার্দ্য ও আনন্দের বার্তা। কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলমানরা ত্যাগস্বীকার করেন, যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, ত্যাগের মহিমাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। এবার বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে আগামীকাল রোববার। ইসলামি বিধান অনুযায়ী ঈদের দিন ও তার পরবর্তী দুই দিন পশু কোরবানি দেওয়া যাবে।
এই কোরবানিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাঙা হয়। এই দিনটি সামনে রেখেই খামারিরা সারা বছর পশু পালন করেন, যাতে ভালো দাম পাওয়া যায়।
আমরা যখন ঈদ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি, তখন দেশের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ খুবই বিপন্ন অবস্থায় আছে। তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য।
এবার এমন সময়ে ঈদুল আজহা এসেছে, যখন ফের করোনার সংক্রমণ বাড়তির দিকে। সে ক্ষেত্রে পশুর হাট, ঈদের জামাত ও সামাজিক অনুষ্ঠানে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। একজনের অসচেতনতার কারণে যাতে ব্যাধিটি ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেব। কিন্তু কোনোভাবে অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলব না।
ঈদের সময় যে পশু কোরবানি হয়, তার বর্জ্য দ্রুত ধুয়েমুছে ফেলতে হবে। চামড়াও বেশি সময় ফেলে রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
আমাদের পাঠক, লেখক, গ্রাহক, হকার, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
ঈদের আনন্দ ও ত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়ুক সবার ঘরে।