ব্রিটিশ আমলে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত ‘কিনব্রিজ’ দেশ-বিদেশে সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। আট দশক ধরে যানবাহনের ভার বহন করে সেতুটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পদচারী-সেতুতে রূপান্তরের প্রস্তাব করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর দুই বছর কেটে গেলেও প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলে ফের ঝুঁকির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ জন্য কিনব্রিজের মুখে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু তাতে করে কি দেশের অন্যতম প্রাচীন সেতুটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুরমা নদীতে বিভক্ত সিলেট নগরের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের যোগসূত্র তৈরি করতে লোহার কাঠামোয় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তৃতীয় দফা সংস্কারের জন্য ২০১৯ সালে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৫২ দিন। সম্প্রতি কিনব্রিজটি আবার যান চলাচলের ঝুঁকির মুখে পড়ে। সেতুটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ (সওজ)। সিটি করপোরেশন থেকে শুধু তদারক করা হয়। সর্বশেষ তদারক করতে গিয়ে কিছু সংস্কারকাজ শেষে কিনব্রিজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পদচারী-সেতুতে রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দেওয়া হয়েছিল। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে কিনব্রিজ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ পদচারী-সেতু হিসেবে নতুন পরিচয় পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, প্রস্তাবটিও ঝুলে আছে।
সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদচারী-সেতু রূপান্তর নয়, আপাতত সংস্কার ও মেরামতের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিনব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে কিনব্রিজটি সংস্কার ও কিছু মেরামতকাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য সওজ থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনসহ সিলেটবাসী কিনব্রিজকে পদচারী–সেতুতে রূপান্তরের পক্ষে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনও (বাপা) এর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
তবে শহরের ওই পারে দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দারা তাদের সুবিধার্থে কিনব্রিজে যানবাহন চলাচল বন্ধে ইচ্ছুক নন। প্রথম আলোর প্রতিবেদক জানালেন, কিনব্রিজের আশপাশে বিকল্প আরও চারটি সেতু আছে। ফলে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে পারলে বিকল্প সেতু দিয়ে দক্ষিণ সুরমাবাসীর চলাচল সম্ভব। সওজ যদি আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে কিনব্রিজকে পদচারী–সেতু হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব। আমরা আশা করব, সর্বমতের দাবি মেনে নিয়ে পুরোনো নিদর্শন হিসেবে সেতুটিকে রক্ষা করায় উদ্যোগ নেবে সওজ।