জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশে আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না বললেই চলে। ফলে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মানুষ কোনো দায় অনুভব করে না। চলনবিলে নির্বিচার শামুক নিধনের ঘটনায় তেমন চিত্রই আমরা দেখছি। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনের গাফিলতির কারণে জীববৈচিত্র্যে শামুকের অসামান্য ভূমিকা সেখানে গৌণ হয়ে গেছে। শ্রমজীবী মানুষের জীবিকাকে লক্ষ্য করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী শামুক আহরণকে জমজমাট ব্যবসায় পরিণত করেছে। বছরের পর বছর সেটি চলে এলেও রোধ করার কোনো প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ আমরা দেখি না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বর্ষা মৌসুম শেষে চলনবিলের পানি কমতে শুরু করলে সেখানে শামুক আহরণের ধুম পড়ে। এবারও তেমনটি দেখা গেছে। মূলত পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীগুলো বেশির ভাগ মারা যায়। বিলের তলদেশ থেকে জাল দিয়ে ছেঁকে তোলা হচ্ছে সেগুলো। শামুক সংগ্রহ করতে গিয়ে উঠে আসছে জলজ উদ্ভিদ ও লতাগুল্মও। প্রতিদিন ১৫-২০টি ট্রাকে করে শামুক যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। খামারের হাঁস ও মাছের খাদ্য ছাড়াও চুন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে শামুক। তবে ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে শামুক সংগ্রহে জেল-জরিমানার বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ হয় না বললেই চলে। সে সুযোগে চলনবিল এলাকায় শামুক নিয়ে এ রমরমা বাণিজ্য চলছে।
প্রাণী গবেষকদের মতে, শামুক হচ্ছে প্রকৃতির বন্ধু। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠাপানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ
করে শামুক। এরা দেহ থেকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশজাতীয় বস্তু মাটিতে ছাড়ে। মরে গেলেও এদের মাংস পচে ও খোলায় মাটিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশজাতীয় সার তৈরি করে এবং মাটি উর্বর করে। এ ছাড়া ধানগাছের ক্ষতিকর পোকা নষ্টকারী দুটি কীটের খাবারও শামুক। কীটগুলোর কারণে ফসলের উৎপাদন বাড়ে। মোটকথা পরিবেশের বাস্তুসংস্থান রক্ষার্থে শামুক বড় ভূমিকা পালন করে। এরা না থাকলে পানির প্রাকৃতিক শোধনক্ষমতা কমে যায়। কৃষিজমি ও পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়।
শামুক রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। যদিও সেটি রুটিনমাফিক মন্তব্য বলা চলে। চলনবিলকে ঘিরে সব কটি উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ না নিলে সেখানে শামুক নিধন কোনোভাবে বন্ধ হবে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি শামুক নিধন রোধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।