রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ডেসটিনি ও যুবকের অনেক সম্পদ আছে, ন্যায্য দামে বিক্রি করলে যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে গ্রাহকদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা ফেরত দেওয়া যাবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক, যাঁদের অনেকে সহায় সম্পদ হারিয়ে এখন নিঃস্ব। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কাউকে (কোনো সংস্থা) দিয়ে সংযুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যেতে পারে।
তবে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে গরমিলও আছে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি নাকচ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। অর্থাৎ বিষয়টি এখনো বাতকে বাত, বাস্তবে কিছু করা হয়নি।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) ১৮৬০ সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় ১৯৯৬ সালে নিবন্ধন নেয় যুবক। ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে তাদের অবৈধ ব্যাংকিংসহ নানা প্রতারণার বিষয় উঠে আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে প্রথম কমিশন গঠন করে। এরপর ২০১১ সালে আরেকটি কমিশন গঠিত হয়। দ্বিতীয় কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, যুবকের ৩ লাখ ৩ হাজার ৭৩৯ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের দাবির পরিমাণ ২ হাজার ৫৮৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অথচ যুবকের সম্পত্তির বাজার মূল্য হবে ৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যুবকের গ্রাহকদের পক্ষে প্রায় ১০ বছর ধরে আবেদন করে যাচ্ছে ‘যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সমিতি’। কোনো কাজ হয়নি। একই অবস্থা হয়েছে ডেসটিনির গ্রাহকদেরও। বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসায়ের মাধ্যমে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে ডেসটিনি। তারা ২০১২ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা তুলে নেয়। তাদের ক্রেতা, পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ। আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে ডেসটিনির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব পুলিশের।
যদি এর গ্রাহকেরা ডেসটিনির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে পরিচালকদের নামে কেন সম্পদ কেনা হলো? ডেসটিনির ব্যবস্থা পরিচালক বর্তমানে কারাগারে আছেন, কিন্তু মামলার সুরাহা হয়নি। গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস কতটা কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন না উঠে পারে না। আইনবিদদের মতে, যুবক ও ডেসটিনির সম্পদ গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সে জন্য সরকারকে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার ছাড়পত্র নিয়েই ব্যবসা করেছে ডেসটিনি ও যুবক। সে ক্ষেত্রে তারা যদি প্রতারণামূলক ব্যবসার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে, তার দায় সরকারও এড়াতে পারে না। যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের ছত্রচ্ছায়ায় কাজ করেছে। যুবকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মী সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে।
ই-কমার্সের নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ডেসটিনি ও যুবকের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। কেবল মৌখিক আশ্বাস নয়, ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ গ্রাহক দেখতে চান, সরকার তাঁদের পাওনা অর্থ ও সম্পদ ফেরত পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনের শাসনের মূল কথা হলো দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে বরাবর উল্টোটা হয়ে আসছে। এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।