কক্সবাজারের মো. আশিক কেবল নিজে মাদক ব্যবসা, চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে ক্ষান্ত হননি, এসব অপকর্ম পরিচালনার জন্য সেখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও তৈরি করেছেন, যঁাদের কাজ হলো ভ্রমণে আসা পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া। গত ১০ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে ১৭টি অপরাধের মামলা হলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা এক নারীকে ধর্ষণ করেন আশিক ও তাঁর সহযোগীরা। গতকাল রোববার পুলিশ আশিকের তিন সহযোগীকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। রাতে আশিকও মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরে আশিকের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছে কিন্তু কোনোটিতে তাঁকে আটকে রাখা যায়নি। সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতিচেষ্টার মামলা হয় এবং তিনি যথারীতি জামিনে বেরিয়ে আসেন। কক্সবাজারে থানা-পুলিশ, র্যাব, পর্যটন পুলিশসহ নানা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। সরকারের দাবি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানো হচ্ছে। ১৭ মামলার আসামি দীর্ঘদিন বাইরে থাকা কি তার প্রমাণ? কেবল আশিক নয়, এ রকম সাত-আটটি সন্ত্রাসী বাহিনী আছে কক্সবাজারে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নাগাল পায় না। মামলা হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আসামিরা বীরদর্পে বেরিয়ে আসেন এবং আবার অপকর্ম চালাতে থাকেন।
এ রকম দুর্ধর্ষ অপরাধীকে যদি সরকার আটক করতে বা শাস্তি দিতে না পারে, তাহলে দেশ থেকে মাদক ও সন্ত্রাস কীভাবে কমবে? ৭ নভেম্বরের মামলায় জামিন পেয়ে আশিক বেরিয়ে না এলে হয়তো পর্যটনে আসা নারী ২২ ডিসেম্বর ধর্ষণের শিকার হতেন না। উদ্বেগের বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করতে পারেনি। এর পেছনে কী রহস্য? অপরাধীর বিচার হয় মামলার তদন্তের ওপর। সঠিক তদন্ত হলে অপরাধী শাস্তি পান। তদন্তে গলদ থাকলে দুর্ধর্ষ অপরাধীও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেকসুর খালাস পেয়ে যান। কোনো এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘সেখানে নতুন এসেছেন’ অজুহাত তুলে দায় এড়ান—এটা দুর্ভাগ্যজনক।
পর্যটন নগরীতে কারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, কারা দুর্ধর্ষ বাহিনী পরিচালনা করেন, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। এসব বাহিনীর পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, থাকে প্রশাসনিক প্রশ্রয়। এসব বন্ধ করতে না পারলে, আইন নিজস্ব গতিতে না চললে দেশ থেকে মাদক ও সন্ত্রাস কখনোই বন্ধ হবে না। আশিকের মতো একজন ব্যক্তি ১০ বছর ধরে কক্সবাজারে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাবেন, মানুষকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করবেন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, তা হতে পারে না। প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। তাঁদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
কক্সবাজারে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি ও সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিলম্বে হলেও ধর্ষণ মামলার মূল হোতা আশিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কর্তব্য হবে দ্রুত তদন্ত শেষ করে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা।