অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে সুদ কারবারি ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে মানুষের দ্বারস্থ হওয়ার ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়। মানুষকে শোষণের হাতিয়ারও বলা হয়ে থাকে সুদ বা দাদনের ব্যবসাকে। ঋণ প্রদানের এ পুরোনো রীতি আইনিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও এখনো অনেক জায়গায় এটি চালু আছে। যার ফাঁদে পড়ে অনেক সময় আত্মহত্যার খবরও আমরা দেখতে পাই। ঋণের জালে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ঘটনাও নতুন কিছু নয়। এর মধ্যে জয়পুরহাট শহরের একটি করুণ ঘটনা আমাদের নাড়া দিয়েছে। সুদ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে একটি পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। করোনাকালে নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিষয়টি উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জয়পুরহাটের মাদারগঞ্জ বামনপুর মহল্লার রতন কুমার মণ্ডল ও লিপি রানী মণ্ডল দম্পতি প্রতিবেশী কল্পনা রানীর কাছ থেকে চড়া সুদে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পেশায় দিনমজুর রতনের বাবার শেষকৃত্যের জন্য পাঁচ বছর আগে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার মৌখিক শর্তে সেই ঋণ নেওয়া হয়। প্রতি মাসে সেই টাকার সুদ দিয়ে আসছিলেন। বাড়তি কোনো আয়রোজগার না থাকায় সংসার পরিচালনা ও সুদের টাকা দিতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ঋণ পরিশোধ করতে ওই দম্পতি একে একে ছয়জনের কাছ থেকে আরও ঋণ নেন। পাঁচ বছরের মাথায় ১ লাখ টাকার ঋণ ১১ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
ঋণ শোধ করতে গিয়ে গত পাঁচ বছরে পৈতৃক আট বিঘা জমি বিক্রি করেছেন রতন। তাঁদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই ৩ শতক বসতবাড়ি ছাড়া কিছুই নেই এখন। চার লাখ টাকা পরিশোধ করেও ঋণের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না তিনি। প্রায় দিনই তিন সন্তান নিয়ে রতনের পরিবারকে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয়। সুদের ব্যবসায়ীরা বসতবাড়িটি এখন দখল করতে চাইছেন। এ ঘটনায় জয়পুরহাটের ডিসি ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রতন।
ডিসি জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক জানালেন, ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন সুদ ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে এভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার। গলাচিপা উপজেলার উত্তর গোপালপুরেও এমন অভিযোগ এসেছে ইউএনওর কাছে। এ ছাড়া নামে–বেনামে গজিয়ে ওঠা অনেক সমিতিও ঋণ দেওয়ার নামে এমন সুদ ব্যবসা করে থাকে।
অবৈধভাবে ঋণ কারবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা চাই স্থানীয় প্রশাসন ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াক।