করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়। বর্তমানে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর পাঠদান বন্ধ আছে, যদিও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অব্যাহত আছে। অনলাইনে ক্লাস চালু থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে সীমিতসংখ্যক অতিথি আপ্যায়ন, মেলা, পর্যটনকেন্দ্রসহ জনসমাবেশস্থলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, গণপরিবহন শপিং মল ও রেস্তোরাঁয় সেবাপ্রার্থীদের টিকা সনদ নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্যজনক হলো এসব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা কোনোটাই মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগের যেমন নজরদারির ঘাটতি আছে, তেমনি জনগণের মধ্যে সচেতনতারও অভাব আছে।
আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সমন্বিত ও সর্বাত্মক প্রয়াস, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নিলে কোনো কাজে আসবে না। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা প্রশাসন দিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে না। এর জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে থাকে, তাতেও এর কার্যকারিতা প্রশ্নসাপেক্ষ। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গেলেই তারা সংক্রমণের বাইরে থাকবে, তার নিশ্চয়তা নেই। কেননা, একই পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরের বাইরে যাচ্ছেন এবং নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে স্কুল খোলা রাখার জন্য বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ২৮ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত। কোভিড-১৯-এর অমিক্রন ধরনটি সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়ছে, এটি যাতে শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।’
ইউনিসেফ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, টিকা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে দেখা যাবে না। কেবল ইউনিসেফ নয়, দেশের ভেতরেও শিক্ষাবিদেরা সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সমালোচনা করেছেন। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে অবিলম্বে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্য তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।
প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফের বন্ধের ধাক্কা শিক্ষাক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, কোনো অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।