সালাহ উদ্দিন আহমদকে সবাই খুঁজছে। বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে সরকার খুঁজছে, পুলিশ-র্যাব খুঁজছে, বিএনপিও খুঁজছে। তবে নিশ্চিতভাবেই মনপ্রাণ দিয়ে খুঁজছেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা। তবে তাঁকে খুঁজে বের করার শক্তি তাঁদেরই সবচেয়ে কম। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই দায়িত্ব তাঁকে আদালতের সম্মুখে, আমাদের সবার সামনে হাজির করা। আমরা এক অজানা আশঙ্কায় আছি যে ওনার না কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।’ এমন আবেদন ও আকুতি জানানো ছাড়া সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রীর এখন আর কীই–বা করার আছে!
নয় দিন ধরে স্বামীর খোঁজ না থাকলে ‘অজানা’ বা ‘ক্ষতি হয়ে’ যাওয়ার আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান তো বিবিসির কাছে সালাহ উদ্দিন আহমদ বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে সালাহ উদ্দিনের জীবনে কী ঘটেছে, উনি সত্যিই বেঁচে আছেন কি না।’ এভাবে নিখোঁজ থাকতে থাকতে ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হিসেবেই রয়ে গেলেন। নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁকেও অনেক খোঁজা হয়েছিল। এখন সম্ভবত কেউ আর ইলিয়াস আলীকে খোঁজেন না। বা তাঁকে খুঁজে পাওয়ার আশা বাদ দিয়েছেন। সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ দশা নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমদ আগেও লুকিয়েই ছিলেন। তিনি আমাদের কাছে নেই, আমরা চেষ্টা করছি আসলে কী ঘটেছে, তা জানার। আমরা প্রথম থেকেই তাঁকে খুঁজছি।’
একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সালাহ উদ্দিন আহমদের ‘লুকিয়ে থাকা’ আর ‘নিখোঁজ’ হওয়া পুরো ভিন্ন দুটি ব্যাপার। তিনি যত দিন লুকিয়ে ছিলেন, তত দিন তো তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেননি যে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে হাজির করার জন্য তাঁর স্ত্রী সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদনও করেননি। সালাহ উদ্দিন আহমদ ‘আগেও লুকিয়েই ছিলেন’ বলে তাঁর বর্তমান নিখোঁজ দশাকে জায়েজ করা যায় কি?
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী ও তাঁর দল বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়ও এর সমর্থন মিলেছে। এখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, ‘তিনি আমাদের কাছে নেই’, তাহলে িক আমরা ধরে নিতে পারি যে কোনো বাহিনীর পরিচয় ব্যবহার করে কোনো গোষ্ঠী এই কাজটি করেছে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জন্য এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালের কারণে সারা শহরের যেখানে নানা স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, সেখানে পিকআপ আর মাইক্রোবাস নিয়ে এমন দাপটের সঙ্গে তো কারও ঘুরে বেড়াতে পারার কথা নয়!
সরকারের অনেকের কথাবার্তায় এমনও মনে হয়েছে যে ‘আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা’ সালাহ উদ্দিন আহমদ নিজেই আত্মগোপনে গেছেন এবং তাঁকে নিয়ে তাঁর দল বিএনপি আরও একটি ‘নাটক’ তৈরি করেছে। এত দমন-পীড়নের মধ্যে বিএনপি যদি পিকআপ ও মাইক্রোবাস নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতে পারে, তবে তো দলটিকে সত্যিই বাহবা দিতে হয়! একের পর এক নাটক বানিয়ে বিএনপি তো তাহলে সরকারকে এর দর্শক বানিয়ে ছেড়েছে! নাকি বিএনপি যেসব ‘নাটক’ মঞ্চস্থ করছে, সেগুলোর পাত্রপাত্রীরা তাদের হলেও নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার ও সরকারি দল!
নয় দিন নিখোঁজ থাকার পর সালাহ উদ্দিন আহমদের ক্ষেত্রে এখন কী কী ঘটতে পারে? প্রথমত, সালাহ উদ্দিন আহমদ যেহেতু ‘আগে থেকেই পালিয়ে ছিলেন’, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো স্থান থেকে তাঁকে ‘গ্রেপ্তার’ করে থানায় হাজির করতে পারে। মাঝের দিনগুলো তিনি পালিয়ে ছিলেন বলেই গণ্য হবে। দ্বিতীয়ত, ‘নাটকের মঞ্চায়ন’ শেষ হলে তিনি ফিরে আসবেন এবং এ ব্যাপারে তিনি নীরবতা পালন করবেন বা কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে কিছু জানা যাবে না। এবং তৃতীয়ত ও সবচেয়ে ভয়ংকরটি হতে পারে তিনি ‘নিখোঁজ’ হিসেবেই রয়ে গেলেন।
আমরা সবাই হয়তো সালাহ উদ্দিনকে খুঁজছি। তবে কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে খুঁজছে তা বলা কঠিন। আপাতত আমরা শুধু তাঁর পরিবারটির দিকে তাকাই। প্রথম অথবা দ্বিতীয় সম্ভাবনার মধ্যেই বিষয়টির সুরাহা হোক। কোনোভাবেই যেন তৃতীয় আশঙ্কাটি সত্য না হয়।
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
[email protected]