শিক্ষা সংস্কার নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের ওপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো চলছেই, রীতিমতো ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে তাদের। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য ও বাস্তবসম্মত করতে চাইলে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম পর্যন্ত বর্ধিত করে তা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এখানে ভাষা, যোগাযোগ, গণিত, মূল্যবোধ প্রাধান্য পাবে। ভাষা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, গণিত, জলবায়ু-প্রাণ-পরিবেশের টেকসই জ্ঞান, পরিচ্ছন্নতা ও রিসাইক্লিং, বিভিন্ন খাতের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাগত আইনি জ্ঞান ও চর্চা, সামাজিক ও মানবিক বোধ, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং মৌলিক বিজ্ঞান ইত্যাদি গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হবে। তবে বাংলা ও ইংরেজিতে গতানুগতিক গদ্য ও পদ্য না পড়িয়ে ভাষা শিক্ষার বিষয়বস্তুতেই উপরিউক্ত থিমগুলো স্থান করে নেবে, যাতে বর্ধিত সিলেবাসের চাপ কমে আসে। কর্মমুখী দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা তৃতীয়তে না চালু করে পঞ্চমে চালু করা যেতে পারে।
অষ্টমের পূর্বে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না, তবে স্কুল মূল্যায়ন থাকবে। তবে পদ্ধতিটি চালুর আগের অতিরিক্ত কাজের জন্য পর্যাপ্ত যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দরকার, মাথাপিছু সর্বোচ্চ ২০ জনের বিপরীতে একজন উচ্চতর ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষকের আয়োজন না করে স্কুল মূল্যায়ন চালু অর্থহীন। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা জেএসসি অষ্টম পর্যন্ত প্রাথমিকের সমাপনী হিসেবে থাকবে, সার্টিফিকেশনের পাশাপাশি স্কুল সফটওয়্যার ডেটাবেইস ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হবে যা স্কুলশিক্ষক ও বহিরাগত শিক্ষক মিলে তৈরি করবেন পঞ্চম থেকে অষ্টমের সব শ্রেণিতে। পঞ্চম থেকে ওপরের প্রতি শ্রেণিতে প্রবর্তিত এই মূল্যায়ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনলাইন ডেটাবেইসেও রক্ষিত থাকবে। এটা এই জন্য যে, আমাদের সন্তানদের ঝোঁক, আগ্রহ ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিভা’র আলোকে যাতে তাদের উচ্চশিক্ষার পথ তৈরি করা হয়, যাতে খুব জোরাজুরিতে প্রকৌশল প্রযুক্তি ও মেডিকেল শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া না হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত হবে। আলাদা নাম করে উচ্চ মাধ্যমিকের স্তর উঠিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ শিক্ষাকে বহু স্তর বিভাজনে দাঁড়া করানোর মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক বাঁধা সরানো হবে। দ্বাদশ পর্যন্ত ভর্তি ও পরীক্ষা ফি সব সরকার বহন করবে। মাধ্যমিকে জলবায়ু ও পরিবেশসহ সামান্য কিছু ওয়ার্ক-লাইফ স্কিলসহ মূলত উচ্চ শিক্ষার জন্য ফাউন্ডেশন কোর্স পঠিত হবে। গণিত, পদার্থ রসায়ন জীব বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, অ্যাকাউন্টিং, সামাজিক ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ও জলবায়ু নৈতিকতা বাধ্যতামূলক ভাবে শেখানো হবে সবাইকে। বিষয়গুলোতে বিজ্ঞান ব্যবসা মানবিক কলা নামক কোনো ভাগাভাগি থাকবে না।
তবে বিজ্ঞান ব্যবসা মানবিক কলা’র বেশ কিছু নৈর্ব্যক্তিক বিষয়াদি থাকবে যেমন, উচ্চতর গণিত, উচ্চতর পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসার বিষয়াদি যা উচ্চ শিক্ষা ভর্তির ঝোঁক ও যোগ্যতার বিচার হিসেবে শিক্ষার্থীকে এগিয়ে নিবে। গুরুত্বসহ কোডিং-প্রোগ্রামিং শেখানো হবে তবে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। সরকার একমুখী সিলেবাসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে স্কুল ও শিক্ষা অবকাঠামো ঠিক না করে, মাথাপিছু হারে যোগ্য ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের বন্দোবস্ত না করে, শ্রেণিশিক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ভিত্তিক না করে, শুধু সিলেবাস সংকুচিত করা একমুখী শিক্ষা ব্যর্থ হতে বাধ্য। একমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য যাতে সিলেবাস কমিয়ে পাশের হার বাড়ানো হতে পারে না, বরং একমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে শিক্ষার্থীদের একবার বিজ্ঞান ব্যবসা ও কলা বিষয়াদি নির্বাচন করে ফেলার পরেও তার ঝোঁক ও সক্ষমতা অনুসারে পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া, পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষাশ্রেণীর আসন খালির সমস্যা সমাধান। বস্তুত একমুখী শিক্ষা নামটাই গোলমেলে, এটা হওয়া উচিত নৈর্ব্যক্তিক শিক্ষা, যাতে সিলেবাস একই কিংবা বরং বেশি হবে। মাধ্যমিকের পরে যাবতীয় ভাগাভাগি শুরু হবে।
এই ভাগাভাগি গুলো এমন হতে পারে-
ধারা-এক: খুব মেধাবী বলে বিবেচিতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক বিভাগে পড়বেন। মূল উদ্দেশ্য শিক্ষক ও গবেষক তৈরি করা। স্নাতকের শ্রেণিতেই অন্তত দুই বা তিনটি আন্তর্জাতিক পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক থাকবে। এটা চার প্লাস দুই বছর মেয়াদি কোর্স হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে। এই শিক্ষার্থীরা দেশের ও ইন্ডাস্ট্রির সমস্যার তাত্ত্বিক মডেল ও বাস্তব সমাধান তৈরি করবেন। অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি ও শিক্ষা গবেষণার একটা যোগসূত্র তৈরি হবে এখানে। কঠিন মনে হলে শিক্ষার্থীরা চাইলেই শিক্ষাবছর শেষে নিচের ধারায় নামতে পারবেন।
ধারা-দুই: খুব মেধাবী ও মধ্যমানের মেধাবীরা অ্যাপ্লাইড ইউনিভার্সিটিতে বা কলেজে পড়বেন যারা অর্ধেক তত্ত্ব (থিওরি), বাকি অর্ধেক শ্রমবাজারের উচ্চ দক্ষতা ভিত্তিক পড়ালেখা (ওয়ার্ক স্কিল) করবেন। মূল উদ্দেশ্য করপোরেট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সিকিউটিভ তৈরি করা। হাইটেক-ইন্ডাস্ট্রির কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা ট্রেনিং নেবেন, কেস-স্টাডি করবেন এবং শ্রমবাজারের সমস্যা সমাধান করবেন। এটা চার যোগ এক বছর মেয়াদি কোর্স হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে। শিক্ষার্থী কারিগরি, ব্যাংকিং, সফটওয়্যার কিংবা ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব অতি দক্ষ মানবসম্পদ লাগে, কিংবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারিগরি ও ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন প্রযুক্তি খাতে যেসব অতি দক্ষ মানব সম্পদ লাগে তার জন্য আগেই তৈরি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এখানে এক বছর বা ২ বছরের ইন্ডাস্ট্রি এটাচমেন্ট থাকবে নিয়মিত ক্লাসের বাইরে, যেখানে শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা সমাধানের প্র্যাকটিক্যাল এপ্রোচগুলার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি’র মানবসম্পদ চাহিদা ও শিক্ষার মধ্যে একটা চমৎকার যোগসূত্র তৈরি হবে এখানে, যাতে ইন্ডাস্ট্রি তার প্রয়োজনমতো মানব সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে তৈরি করে নিবে। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা চাইলে শিক্ষাবছর শেষে ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম ধারার তাত্ত্বিক স্তরে উঠতে পারবেন, সেখানে তাঁদের এক বছর লস করে ফাউন্ডেশন কোর্স করে পুনরায় শুরু করতে হবে। চাইলেই প্রতি শিক্ষাবছর শেষে নিচের ধারায়ও নামতে পারবেন।
প্রথম দুটি দুটি ধারায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব জাত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার বাজার চাহিদা কেন্দ্রিক তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক কোর্স পঠিত হবে। আর তৃতীয় ধারায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফিউশন প্রযুক্তি গুলোর অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স সাপোর্ট সক্ষমতা তৈরি হবে। প্রথম দুটি ধারায় ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনান্সিং ব্যাংকিং ব্যবসা ও শিল্পকলার মডেলার, ডিজাইনার তৈরি করা হবে। তৃতীয় ধাপে নকশা বাস্তবায়নকারী, বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন চালানোর উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করা হবে।
ধারা-তিন: সাধারণ মেধাবীরা দ্বাদশের পরেই বিজ্ঞান-ব্যবসা-কলার কারিগরি স্কুলে পড়বেন যারা খুব কম থিওরি পড়বেন এবং মূলত প্রায়োগিক স্কিল নিয়ে কাজ করবেন, সাধারণ চাকরিতে গিয়ে করতে হবে তা স্কুলেই শিখবেন। এটা তিন বা চার বছর মেয়াদি হতে পারে। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা চাইলে প্রতি দুই শিক্ষা বছর শেষ করে রেজাল্টের ভিত্তিতে উচ্চ স্তরে উঠতে পারবেন, যেখানে তাঁরা অন্তত এক বছর লস করবেন ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য। আবার চাইলে তিন বা চার শিক্ষা বছর শেষ করেও রেজাল্টের ভিত্তিতে উচ্চ স্তর উঠতে পারবেন। বাংলাদেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজ ও বিষয় এই ধারায় আসবে। এখানে একদিকে দ্রুত কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে কিংবা চাইলে উচ্চ শিক্ষা কমিউনিটির ব্যবস্থাও থাকবে।
প্রথম দুটি দুটি ধারায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব জাত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার বাজার চাহিদা কেন্দ্রিক তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক কোর্স পঠিত হবে। আর তৃতীয় ধারায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফিউশন প্রযুক্তি গুলোর অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স সাপোর্ট সক্ষমতা তৈরি হবে। প্রথম দুটি ধারায় ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনান্সিং ব্যাংকিং ব্যবসা ও শিল্পকলার মডেলার, ডিজাইনার তৈরি করা হবে। তৃতীয় ধাপে নকশা বাস্তবায়নকারী, বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন চালানোর উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করা হবে।
ধারা-চার: যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অ্যাপ্লাইড কোর্সে যাওয়ার মতো মেধাবী বা সক্ষম নন, তাঁদের জন্য দ্বাদশের পরে এক বা দুই বছর মেয়াদি সার্টিফিকেশন কোর্স খুলতে হবে। তাঁদের সেমি-স্কিল কাজের জন্যও প্রশিক্ষণ কাঠামো তৈরি করতে হবে। আধুনিক গৃহশ্রম, যান্ত্রিক কৃষি, মাছ ধরা, কামার কুমার যে যে কাজই করেন না কেন, সবাইকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়তে হবে এবং সবারই একটা সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। নির্মাণ শ্রম, প্লাম্বিং, কারপেন্টিং, পেইন্টিং, ওয়েল্ডিং, অটোমোবাইল, ইলেকট্রিশিয়ান, গৃহ শ্রম, গার্মেন্টস শ্রম, রাস্তা বানানো, মাছ ধরা, চাষ করা ইত্যাদি শত শত সব খাতে স্বল্প হলেও শুরু থেকেই দক্ষতা, কারিগরি সক্ষমতা ও পেশাদারির যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ লোকে যে কাজই করবে তার জন্যই কিছু না কিছু সার্টিফেকেশন কোর্স ও ট্রেনিং থাকবে। এই সার্টিফিকেশনের সঙ্গে বিদেশে শ্রম রপ্তানির প্রসেসকে ইন্টিগ্রেটেড করতে হবে। কম্পিউটার চালনা, অফিসের রিপোর্টিং বসের সঙ্গে মৌলিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে টয়লেট ব্যবহার, কাজের নিরাপত্তা, খাওয়া পোশাক পরিধান ঘুমানোর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ওপর দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
বর্তমানে ইনফরমাল ও সেমি-ফরমাল কর্মসংস্থান গুলোকে সহজ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সনদ সহ প্রতিষ্ঠানিকিকরণ করা হয়নি বলে এখানে কাজ করা লোকেরা দেশে-বিদেশে স্বীকৃতিহীন, আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পাচ্ছেন না। এজেন্টের মাধ্যমে আউটসোর্স হয়ে কম বেতনে অভিজ্ঞ শ্রমিকরাও ঠকছেন। স্বীকৃতি না থাকায় খাতগুলো পেশা হিসেবেও জনপ্রিয় হচ্ছে না, সমাজেও সম্মানজনক হচ্ছে না। যোগ্য লোক না পাওয়ার অজুহাত সহ, বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও পেশাদার চাপ ও প্রলোভনে স্বল্প সংখ্যক সেমি স্কিলড শ্রমিককে দীর্ঘ শ্রম ঘণ্টায় রাত দিন কাজ করান হচ্ছে আমাদের শিল্পে। ব্যাপক কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছে এজেন্ট। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বহু স্বল্প মেয়াদি কারিগরি কোর্স এই খাতে আসবে, তবে আগে কোর্স কনটেন্ট, শিক্ষাদান পদ্ধতি, হাতে কলমে ট্রেনিং দেওয়ার উপকরণ, শিক্ষক মান ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরে পেশাগত দক্ষতার বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এতে পেশার সঙ্গে পরিচিত বা দক্ষ রিসোর্স বা গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবেন; যা দেশ ও প্রবাসের শ্রমবাজারের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয় ঘটাবে।
যেহেতু বর্তমান প্রাথমিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা খুবই পশ্চাৎপদ (মাত্র পঞ্চম পর্যন্ত), তাই একধাপেই দ্বাদশ পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার স্তরে পৌঁছার পদক্ষেপ বুমেরাং হবে। সরকারকে এখনই অষ্টম পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্প্রসারণ করে ফেলা উচিত যা মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই দশমে উন্নীত হবে। ঠিক কোন সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা কোন শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে তাঁর একটা বিধিবদ্ধ রোডম্যাপ চাই।
ধারা-পাঁচ: আমাদের প্রতিবন্ধী নাগরিক, যাঁদের জন্য সাধারণ শিক্ষা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তাঁদের জন্য দরকার বিশেষ পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা। প্রতিবন্ধী শিশুর বেলায় সমাজে বেশ কিছু কুসংস্কার আছে। এই সব কাটিয়ে পিছিয়ে পড়া নাগরিককে অক্ষম না ভেবে তাদের জন্য বিশেষ স্কিল তৈরির বিশেষ স্কুল তৈরি করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশু ঠিক দৃষ্টি, বুদ্ধি, বাক, শ্রবণ, স্বাস্থ্য, হাইপার অ্যাক্টিভিটি ইত্যাদি কোন বিষয়ে পিছিয়ে তা নির্ণয়ের জন্য প্রতিটি উপজেলায় রুটিন সহ অন্তত একজন করে পুষ্টিবিদ, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট এবং একজন করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগদান জরুরি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষকদের মতামত এবং এই বিশেষজ্ঞদের যাচাই বাছাইয়ের ভিত্তিতে একজন শিশুকে নেওয়া হবে বিশেষায়িত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে শিক্ষা পদ্ধতিতে শ্রবণ-বলন মেধা চিন্তা বা স্বাস্থ্য বা বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধীদের উপযোগী লার্নিং টুল বা শিক্ষা কাঠামো থাকবে। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি সর্ব ফ্যাসিলিটি সম্পন্ন স্পেশাল স্কুল এবং স্পেশাল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারও থাকা চাই। প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি প্রাথমিক স্কুলের সব শিক্ষার্থীর দৃষ্টি, বুদ্ধি, বাক, শ্রবণ, স্বাস্থ্য, হাইপার অ্যাক্টিভিটি ইত্যাদি এখানে যাচাই বাছাই হবে বছরে অন্তত একবার। এতে করে আমাদের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটা অনন্য মাত্রা আসবে।
একজন পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীকে সীমিত সক্ষমতার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রের চাকরি বণ্টনে আনার চর্চা তৈরি করতে হবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমাজে দৃষ্টি,বুদ্ধি কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধীর মানবিক মর্যাদা তৈরির স্পেস তৈরি করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে বহু নতুন নতুন ভৌত ও মানবিক দৃষ্টিতে (ডেভেলপমেন্ট এবং হিউম্যানিস্টিক আসপেক্ট) বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে সাজাতে হবে। সিলেবাস পরিবর্তনই শিক্ষা সংস্কার নয়। দারিদ্র্য তিন শতাংশে না নামা পর্যন্ত শিক্ষায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগ জিডিপির অন্তত দশ শতাংশ করতে হবে, স্বল্প বরাদ্দে দুর্নীতিমুক্ত মানসম্পন্ন কাজ করতে হবে। তবেই আমরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার যে কোনো ভবিষ্যৎ পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জের বিপরীতে ঝুঁকিমুক্ত থাকব, এবং ক্রমাগত ভাবে ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতায় নিজেদের উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হব।
ফয়েজ আমহমদ তৈয়্যব [email protected]