ইবাদত ও প্রতিদানে নারী ও পুরুষের রয়েছে যথাযথ যৌক্তিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪)।’ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, রমজান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করে, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে এবং শরিয়াহসম্মত বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করে; সে জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে (আবু দাউদ)।’
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এবং যাবতীয় ইবাদতে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে। নারীরা রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবিহ নামাজও পড়বেন। কোরআন তিলাওয়াত ও ইতিকাফ ইত্যাদিও আমল করবেন। নারীদের জন্য জামাতে শামিল হওয়া জরুরি নয়। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা সব সময়ই প্রয়োজন। নারী ও পুরুষ স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্তা। নারীরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজেদের সোনাদানা, গয়না ও টাকাপয়সা, অর্থসম্পদের জাকাত প্রদান করবেন এবং সদকাতুল ফিতরও আদায় করবেন। যদিও নারীর পক্ষে পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, সন্তান বা অন্য কেউ জাকাত ও ফিতরা আদায় করে দিলে তা-ও কবুল হয়ে যাবে। যেহেতু আর্থিক ইবাদতগুলো একজন অন্যজনের পক্ষ থেকে আদায় করতে পারেন।
রোজা অবস্থায় যদি কেউ কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরা করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নাবান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ চাখতে পারবেন। মুখে বা জিবে নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলিও করে নিতে পারেন।
নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে। মায়েরা রোজা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না, তা নিজের সন্তান হোক বা অপরের সন্তান; এমনকি এমনিতে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার বা অজুর ক্ষতি হয় না। কাটাছেঁড়া বা সেই স্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে (তা যে পরিমাণেই হোক না কেন) রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না, তবে অজু ভঙ্গ হবে। কারণ, রোজা শুধু পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা বিনষ্ট হয়; অন্য কোনো কারণে নয়।
উল্লেখ্য, রক্ত বা তরল বের হওয়া অজু ভঙ্গের কারণ; রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে নারীদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এ রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও মুত্তাকি চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে ওই রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। নারীরা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা করতে পারবেন না, ওই রোজাগুলো পরে কাজা আদায় করতে হবে (ফাতাওয়া মিসরিয়া)।
পিরিয়ড বা রজঃস্রাব চলাকালে রোজা রাখা যায় না, নামাজ পড়া যায় না এবং কোরআন তিলাওয়াত করা যায় না। এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া–কালাম, দরুদ ইস্তিগফার, হাদিস তফসির, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আজকার, অজিফা ইত্যাদি আমল করা যাবে। এ অবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জায়নামাজও ব্যবহার করতে পারবেন, সাহ্রি ও ইফতারে শামিল হতে পারবেন, রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করতে পারবেন। ঋতুমতী নারীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা কারও অজু-গোসল প্রয়োজন হয় না। রজঃস্বলা নারীর সঙ্গে স্বামীর স্ত্রীসুলভ আচরণ বা রতিক্রিয়া নিষিদ্ধ বা হারাম।
কোনো নারী বিশেষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তাঁর মাসিক বন্ধ রেখে যদি রোজা পালন করেন, তবে তার রোজা আদায় হয়ে যাবে। যদি এতে তার শারীরিক ও মানসিক কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে ওই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপ রোজার মধ্যে মাসিক চলাকালে দিনের বেলায় তা বন্ধ হলে সেদিনও পানাহার থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না; পরে ওই রোজাও কাজা আদায় করবে।
রোজা অবস্থায় যদি কেউ কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরা করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নাবান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ চাখতে পারবেন। মুখে বা জিবে নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলিও করে নিতে পারেন।
রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। সাজসজ্জায় রোজার ক্ষতি হয় না। তবে লক্ষ রাখতে হবে, পর্দা-পুশিদা ও শরিয়তের বিধানের যেন লঙ্ঘন না হয়।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম