রজব মাসের তাৎপর্য ও করণীয়

রজব হলো আরবি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস। এ মাসের পূর্ণ নাম ‘আর রজবুল মুরাজ্জাব’। ‘রজব’ অর্থ সম্ভ্রান্ত, প্রাচুর্যময়, মহান। ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ সম্মানিত; রজবুল মুরাজ্জাব অর্থ হলো প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস। হারাম তথা সম্মানিত ও যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হলো রজব। হারাম মাস চারটি হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান–জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বছর হয় বারো মাসে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো ‘রজব মুদার’, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। (মুসলিম)। ‘মুদার’ অর্থ উভয়বিদ বা বহুবিদ কল্যাণের সম্মিলন। রজব ও শাবান হলো জোড়া মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে একত্রে রজবান বা রজবাইন অর্থাৎ রজবদ্বয় বলা হয়। রমজানের পূর্বে এই দুই মাস ইবাদত ও আমলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং সবিশেষ তাৎপর্যময়।

রজব ও শাবান মাসব্যাপী প্রিয় নবীজি (সা.) এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাবাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (সুনানে বায়হাকি ও মুসনাদে আহমাদ)। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান ও রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবী করিম (সা.)-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’

রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলো, অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা। কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া। যাঁরা জানেন, তাঁদের জন্য আরও সহিহ্-শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ শেখা। নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত, দোয়া-দরুদ ও মাসআলা-মাসায়িল ভালোভাবে শেখা; যেহেতু রমজানে নামাজ বেশি বেশি পড়া হবে। নেক আমল বা ভালো কাজের অভ্যাস ও চর্চা বৃদ্ধি করা। দ্বীনি ইলম তথা ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া।

রজব ও শাবান মাস হলো রমজান মাসের প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি শারীরিক-মানসিক-আর্থিক অর্থাৎ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমজান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচি পরিবর্তন হবে, তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং রমজান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ রয়েছে। তাই আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

রমজান মাসে যেন ইবাদতের পরিবেশ রক্ষা হয়, সে বিষয় প্রস্তুতি নিতে হবে। দানখয়রাত বাড়াতে হবে। রমজানে গরিব মানুষ যেন ভালোভাবে সাহ্‌রি ও ইফতার করতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা রজব-শাবান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা প্রতি মাসের মতো এ মাসেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা নবীজি (সা.) কখনো তরক করেননি। অনুরূপ তাহাজ্জুদ নামাজও নবীজি (সা.) কখনো ছাড়েননি। রমজানের প্রস্তুতি মানে ইবাদতের প্রস্তুতি; তাই এই মাস থেকেই ইবাদতের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ফরজ ইবাদতের প্রতি অবহেলা বা উদাসীনতা ও শিথিলতা পরিহার করে সচেতনভাবে সযত্ন আমল করতে হবে।

আরবি মাসের তথা চান্দ্র তারিখের হিসাব রাখতে হবে এবং ২৯ ও ৩০ তারিখ শাবান মাসের নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করতে হবে। নতুন চাঁদের উদয় নিশ্চিত হলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইমান ও নেক আমলের সামর্থ্যের দোয়া করতে হবে। নিজে আমল করার পাশাপাশি অন্যদের আমলে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিশু ও সন্তানদের কালিমা, নামাজ ও কোরআন শিক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে এবং সবার ইমান ও আমলের হেফাজতের জন্য দোয়া করতে হবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]