২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টের সেবা

মিরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। ইসলামি পরিভাষায় মিরাজ হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক সশরীরে স্বজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হজরত জিবরাইল (আ.) ও হজরত মিকাইল (আ.) সমভিব্যাহারে বোরাক বাহনের মাধ্যমে কাবা শরিফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে, প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত গমন, মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে দিদার লাভ ও জান্নাত–জাহান্নাম পরিদর্শন করে আসা।

‘ইসরা’ অর্থ রাতের সময়ে ভ্রমণ। যেহেতু মিরাজ রাতে হয়েছিল, তাই এটি ইসরা। বিশেষত কাবা শরিফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘তিনি পবিত্র যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্র–ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)।

মিরাজ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মুজিজা বা অসাধারণ অলৌকিক ঘটনা। নবুয়তের ১১তম বছরে ২৭ রজব রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়। তখন নবীজির বয়স ৫১ বছর। এ বছর নবীজির চাচা আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন এবং আবু তালিবের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে নবীজির সহধর্মিণী হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)–এর ওফাত হয়। তাই এ বছরকে আমুল হুজন বা দুশ্চিন্তার বছর বলা হয়। প্রিয় নবী (সা.)–কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ও স্বীয় রহস্যলোক দেখাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবিবকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যান।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজ হয়েছিল সশরীর জাগ্রত অবস্থায়। কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। মিরাজের বিবরণ কোরআন কারিমে ২৭ পারায় ৫৩ নম্বর সুরা নাজম–এর ১ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে এবং ১৫ পারায় ১৭ নম্বর সুরা ইসরা বা বনি ইসরাইলের প্রথম ও ২২ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে বুখারি, মুসলিম ও সিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য কিতাবেও ইসরা এবং মিরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথি (মুহাম্মদ সা.) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি মনখোদ কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি, যা (তাঁর কাছে) পাঠানো হয়। তঁাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর। সে (ফেরেশতা) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর গগনে। অতঃপর নিকটবর্তী হয়েছে, পরে নির্দেশ করেছে। তারপর দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট হয়েছে। পুনরায় তিনি ওহি করেছেন তাঁর বান্দার প্রতি, যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে।...না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’ (সুরা-৫৩ নাজম, আয়াত: ১-১৮)।

মিরাজ রজনীতে হাবিব ও মাহবুবের একান্ত সাক্ষাতে যেসব বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কোরআন মাজিদে এসেছে। সুরা বনি ইসরাইলের ২২ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ মুমিনদের তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতে নিষেধ করেছেন; পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে বলেছেন; তাঁদের জন্য দোয়া করতে বলেছেন; স্বজন ও মিসকিনদেরও অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছেন; অপচয় ও কৃপণতা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, মিসকিন ব্যক্তি কিছু চাইলে সামর্থ্য না থাকার কারণে দান করতে অপারগ হলে সাহায্যপ্রার্থীকে নম্রভাবে অপারগতার কথা জানাতে বলেছেন; দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন; ব্যভিচার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন; অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা ও এতিমের সম্পদ হরণ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন; মাপে কম না দেওয়া ও সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে বলেছেন এবং অহংকারভরে চলতে নিষেধ করেছেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিরাজের উপহার। নামাজের তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু মিরাজের সংলাপের স্মারক। মিরাজের ওই সিদ্ধান্তমালার সরল বিবরণ ‘স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টের সেবা’ তথা মানবকল্যাণ।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]