ভারতে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর ৮ জন এসেছেন উত্তর প্রদেশ (ইউপি) থেকে। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় শুধু এ রাজ্যে হিস্যা ৮০ আসন। অথচ ২৮টি রাজ্য আছে দেশটিতে। এই প্রদেশের যেকোনো নির্বাচন তাই অধিকাংশ সময় ভারতের ‘জাতীয় ভোটযুদ্ধ’ হিসেবে গণ্য হয়। সে রকম আরেক ভোটযুদ্ধ আসছে তিন-চার মাস পর। রাজনৈতিক দলগুলোতে তাই সাজ সাজ রব। সবাই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। উত্তর প্রদেশের আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির পরবর্তী রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অনেকখানি আঁচ করা যাবে। তাই এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে ভারতের বিদেশি শত্রু-মিত্ররাও।
যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে বিজেপির ভয়
ভারতভুক্ত এক রাজ্য হলেও ‘ইউপি’ বিশ্বের অনেকে দেশের চেয়ে আয়তন ও লোকসংখ্যায় বড়। বাংলাদেশের চেয়ে এ রাজ্য আকারে প্রায় দ্বিগুণ। লোকসংখ্যায় পাকিস্তানের প্রায় সমান। এ রকম কোনো জনপদে নির্বাচনমাত্রই বড় আয়োজন। সেই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনে যিনি নেতৃত্ব দেন, ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর অনিবার্য এক গুরুত্ব তৈরি হয়ে যায়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সেই বিবেচনায় বিজেপি ও ভারতীয় রাজনীতির বড় এক চরিত্র। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর পরই তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব। এবারও বিজেপি তাঁকে সামনে রেখে নির্বাচনে নেমেছে।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কট্টরপন্থী এবং ধর্মবাদী দল হিসেবে বিবেচিত বিজেপিতে আদিত্যনাথকে দেখা হয় দলের চেয়েও ‘কট্টরপন্থী’ হিসেবে। মুসলমান, মসজিদ ইত্যাদি বিষয়ে প্রায়ই আক্রমণাত্মক কথা বলে নজর কাড়েন তিনি। নারী স্বাধীনতা এবং আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়েও তাঁর আপত্তি। এসব তাঁর ‘জনপ্রিয়তা’র জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে অতীতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদে ‘প্রশাসক’ হিসেবে তিনি কতটা সফল, সে বিষয়ে বিজেপি শিবিরে সন্দেহ-অবিশ্বাস আছে। অন্তত মহামারির মাঝে তিনি দক্ষ হাতে রাজ্য চালাতে পারেননি। উত্তেজক এই যোগীকে নিয়ে বিজেপি নির্বাচনে ভালো করার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। কিন্তু তাঁকে পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। উত্তর প্রদেশে বিজেপি অনেকটাই আদিত্যনাথনির্ভর। সে কারণে এই নির্বাচনে যোগীর ভাগ্য এবং বিজেপির ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। বিজেপি এখানে খারাপ করলে ২০২৩-এ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী শক্তির জন্য সেটা টনিকের মতো হবে।
বিজেপি এগিয়ে; তবে শঙ্কামুক্ত নয়
ইউপির গত নির্বাচনে বিজেপি ৩৮৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছে ৩১২ আসন। আগের নির্বাচনে ৩৯৮ আসনে লড়ে পায় ৪৭ আসন। তারও আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৫১ আসন। ইউপির জমিন কীভাবে আরএসএস-বিজেপি দখল করেছে, সেটা গত ১৫ বছরের এই চিত্র থেকে স্পষ্ট। এই ‘দখল’ কায়েম হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে।
পশ্চিমবঙ্গে বড় ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হারের পর যেকোনো একটা নতুন বিজয় এ মুহূর্তে বিজেপি শিবিরের জন্য জরুরি। উত্তর প্রদেশে বিজেপিবিরোধী শিবির তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বহুভাবে বিভক্ত।
বিজেপির আগে এখানে রাজত্ব করেছে যাদব ও দলিতপ্রধান সমাজবাদী দল (এসপি) ও বহুজন সমাজ দল (বিএসপি)। ‘হিন্দুত্ব’-এর বাইরে নির্বাচনী সফলতায় জাতপাতের অঙ্ক বেশ কাজ করত তখন। এখনো একেবারে কম করে না। যে কারণে গত জুলাইয়ে ভারতের নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উত্তর প্রদেশ থেকে এমন সাতজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে—যাঁদের তিনজন ‘শিডিউল কাস্ট’ এবং তিনজন আরও ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’র প্রতিনিধি। অর্থাৎ বিজেপি শুধু ধর্মের ব্যবহারে ভরসা করছে না, বিভিন্ন ছোট ছোট জাতকেও হাতে চায়। তবে জয়ের সম্ভাবনায় এবারও তারা এগিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গে বড় ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হারের পর যেকোনো একটা নতুন বিজয় এ মুহূর্তে বিজেপি শিবিরের জন্য জরুরি। উত্তর প্রদেশে বিজেপিবিরোধী শিবির তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বহুভাবে বিভক্ত। তবে কেন্দ্রে দুই দফা এবং রাজ্যে গত পাঁচ বছর একই দলকে রাজত্ব করতে দেখে ভোটারদের মাঝে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতে পারে। ফলে বিজেপি ভয়মুক্ত নয়। তা ছাড়া এখানকার বিজেপিতে উপদলীয় কোন্দল আছে।
দরিদ্র ভোটারদের ভুলিয়ে রাখতে ধর্ম ও জাতপাতের প্রচারণা
উত্তর প্রদেশ যেমন ভারতের বড় প্রদেশ—তেমনি দারিদ্র্য এগিয়ে। প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। এটা জাতীয় দারিদ্র্য-গড়ের চেয়ে ৮ ভাগ বেশি। ১৯৮০ সালে এটি ভারতের চতুর্থ দরিদ্র রাজ্য ছিল। এখন দ্বিতীয় স্থানে। এই রাজ্যে নবজাতক মৃত্যুর হার আফ্রিকার অনুন্নত এলাকার চেয়েও খারাপ। মহামারিতে চিকিৎসা ও শেষকৃত্যের সংকটে এখানকার অনেক লাশ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা বিশ্ব সংবাদ হয়েছে। কিন্তু এসবের পরও দারিদ্র্য দূর করা বা উন্নয়ন প্রদেশটির নির্বাচনে প্রধান বিষয় হয় না। রুটি-রুজির বিষয় বা সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গ এখানকার রাজনৈতিক আলাপে ঢুকতে দেওয়া হয় কম। ধর্মকেই সমাজে আলোচ্য বিষয় করে রাখা হয় নিয়মিতভাবে।
দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে—এটাই যোগী আদিত্যনাথ সরকার বিশাল সফলতা হিসেবে দেখাচ্ছে। নির্বাচনে বিজেপি মূল ইস্যু করতে চায় ধর্মান্তর বন্ধ করা এবং হিন্দু মেয়েদের অপর ধর্মে বিয়ে নিষিদ্ধ করার মতো সাম্প্রদায়িক বিষয়কে। তাদের দিক থেকে প্রচারণার আরেক বড় বিষয় ‘মুসলমানদের অতিরিক্ত জন্মহার’। এ রকম অবস্থায় কর্মসংস্থান বা স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়গুলোতে কোনো দলের কী পরিকল্পনা, সেটা আর আলোচনাতেই আসে না। তবে ভারতজুড়ে যে কৃষক আন্দোলন চলছে, তার একটা প্রভাব এই রাজ্যেও পড়তে পারে। সেই শঙ্কা থেকে হঠাৎ ‘কৃষাণ সম্পর্ক যাত্রা’ নামে সাংগঠনিক কর্মসূচি চালু করেছে বিজেপি।
ধর্ম ও জাতপাতের বিবেচনায় দলিত, মুসলমান, উচ্চবর্ণ ইত্যাদি নামে অনেক ভোটব্যাংক আছে। বিজেপি চেষ্টা করে হিন্দুত্ব, পেশিশক্তি এবং অর্থশক্তির মাধ্যমে জাত-পাতের এই হিসাব উতরে যেতে। গত নির্বাচনে সেভাবেই তারা সফল ছিল।
জাত ও ধর্মের সমীকরণে মুসলমানরা যেভাবে পিছিয়ে
উত্তর প্রদেশ বহু ‘জাত’-এর রাজ্য। এখানে দলও অনেক। গত নির্বাচনে ২৯০টি দল ভোট পেতে নেমেছিল। প্রায় সব ছোট ছোট ‘জাতে’র একাধিক দল আছে। স্বাধীনতার পর রাজ্যের ভোটে ভূস্বামীদের যে প্রভাব ছিল, সেটা এখন তেমন কাজ করে না। তবে জাতপাতের অঙ্ক টিকে আছে শক্তি নিয়ে।
ধর্ম ও জাতপাতের বিবেচনায় দলিত, মুসলমান, উচ্চবর্ণ ইত্যাদি নামে অনেক ভোটব্যাংক আছে। বিজেপি চেষ্টা করে হিন্দুত্ব, পেশিশক্তি এবং অর্থশক্তির মাধ্যমে জাত-পাতের এই হিসাব উতরে যেতে। গত নির্বাচনে সেভাবেই তারা সফল ছিল।
বিজেপির বড় ভোটব্যাংক উচ্চবর্ণ। যাদের হিস্যা প্রায় ১৫ ভাগ। এদের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভোট যুক্ত করতে বিজেপি নানা প্রলোভনে তাদের কাছে টানে। কুর্মি, নিষাদসহ এ রকম অনেকের ক্ষেত্রে তারা সফল। রাজ্যজুড়ে কুর্মিরা ৫ ভাগ; নিষাদরা প্রায় ৪ ভাগ। তিনজন কুর্মিকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছে বিজেপি।
আঞ্চলিক দল সমাজবাদী পার্টি বা এসপির মূলধন যাদব ও মুসলমানরা। আর বহুজন সমাজ দল বা বিএসপির প্রধান সমর্থক দলিতরা। যাদব ও মুসলমান মিলিয়ে ভোটের হিস্যা ৩০ ভাগ। দলিতরা প্রায় ২০ ভাগ। এ রকম কোনো জাতই অন্ধভাবে এক দলের হয়ে থাকে না আজকাল; বরং নানান দলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তারা বিধানসভায় নিজেদের প্রতিনিধি বাড়িয়ে নেয়। যে কারণে দেখা যায়, লোক হিস্যায় মাত্র ১৫ ভাগ হয়েও প্রাদেশিক সভায় উচ্চবর্ণের কবজায় থাকে ৪০ ভাগ আসন। মুসলমানরা এই খেলায় হারছে কেবল। রাজ্যে তারা জনসংখ্যায় প্রায় ১৯ ভাগ। সেই হিসাবে প্রাদেশিক সভায় তাদের আসন থাকা উচিত ৭০-৮০টি। কিন্তু আছে ২৫ জন। ২০১২ সালেও ছিল ৬৮। ২০০৭ সালে ছিল ৫৬ জন।
উত্তর প্রদেশে বিজেপির রাজনীতিতে মুসলমানঘৃণা প্রধান এক আকর্ষণ। গত নির্বাচনে তাদের জোট একজন মুসলমানকেও মনোনয়ন দেয়নি। তাতে ক্ষমতায় যেতে অসুবিধা হয়নি। এমনও বলা হয় এখানে, যে দল মুসলমানদের বেশি প্রার্থী করবে, তারা হারবে। সংখ্যাগুরু ভোটারদের মাঝে ধর্মীয় মেরুকরণ প্রবল। বিজেপি এবারও বলছে, নির্বাচনে মুসলমানদের মনোনয়ন দেবে না।
মুসলমানদের সর্বভারতীয় নেতা আসাদুদ্দীন ওয়াইসি জানিয়েছেন, তাঁর দল (‘মিম’) ইউপিতে ১০০ আসনে প্রার্থী দেবে। মুসলমানদের কাছে টেনে ‘মিম’ এভাবে নির্বাচন করলে তাতে বিজেপিরই লাভ; ক্ষতি এসপি ও কংগ্রেসের। জাত-পাত-ধর্মের এই সমীকরণে ছায়া ফেলছে অর্থশক্তিও। বিশেষ জাতের হলেই হয় না—প্রার্থীর নিজের মুদ্রাশক্তি থাকতে হয় বা তার পেছনে ব্যবসায়ীদের মদদ লাগে জিততে। এখানেও বিজেপি এগিয়ে। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের পাশাপাশি বাণিজ্যের গভীর বন্ধন ঘটিয়েছে তারা।
ছোট দলগুলো মুদ্রার শক্তিতে পিছিয়ে থাকে। সে জন্য সামান্য অন্য প্রাপ্তির বিনিময়ে জোট করে বড় দলগুলোর সঙ্গে। ইউপিতে এ রকম ছোট-দল বহু। যেমন ‘নিষাদ’ নামে পরিচিত জেলেদের প্রচুর ভোট আছে ‘নিষাদ পার্টি’র হাতে। ‘দস্যু’ ফুলন দেবী এই জাতের সুপরিচিত এক চরিত্র। ধর্ষণের বদলা হিসেবে তিনি যে ‘ঠাকুর’দের মারতেন, সেই ঠাকুর সম্প্রদায়ের সদস্যই আজকের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। কিন্তু তাতে কী! নিষাদদের দল এখন বিজেপির মিত্র। বিজেপি জিতলে ফুলন দেবীর মূর্তি গড়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এতেই নিষাদরা খুশি!
উত্তর প্রদেশে বিজেপির রাজনীতিতে মুসলমানঘৃণা প্রধান এক আকর্ষণ। গত নির্বাচনে তাদের জোট একজন মুসলমানকেও মনোনয়ন দেয়নি। তাতে ক্ষমতায় যেতে অসুবিধা হয়নি। এমনও বলা হয় এখানে, যে দল মুসলমানদের বেশি প্রার্থী করবে, তারা হারবে। সংখ্যাগুরু ভোটারদের মাঝে ধর্মীয় মেরুকরণ প্রবল। বিজেপি এবারও বলছে, নির্বাচনে মুসলমানদের মনোনয়ন দেবে না।
কম ভোটে বেশি আসন: সংকটে নির্বাচনী ব্যবস্থা
ভারতের রাজনীতিতে এ কথা বেশ চালু: নয়াদিল্লি যেতে লক্ষ্ণৌ হয়ে এগোতে হয়। সব সময় এটা সত্য হয়নি। উত্তর প্রদেশের ক্ষীণ সমর্থন নিয়েও অনেক দল ও রাজনীতিবিদ নয়াদিল্লিতে রাজত্ব করেছে। আবার উত্তর প্রদেশের প্রধান দল হয়েও বিএসপি বা এসপি নয়াদিল্লির মসনদে বসতে পারেনি। তবে উত্তর প্রদেশে ‘ভালো ফল’ ভারতের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানের জন্য জরুরি। বিশেষ করে বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য এবারের অবস্থাটি সে রকম।
নেহরু-গান্ধী রাজপরিবারের ‘নিজস্ব প্রদেশ’ ইউপি। কিন্তু ইন্দিরা মারা যাওয়ার পর পরিবারের নতুন প্রজন্মের হাতে কংগ্রেস ক্রমে ভিত্তি হারাচ্ছে এখানে। প্রদেশটিতে প্রায় লজ্জাজনক অবস্থা তাদের। পুরো প্রদেশে গত নির্বাচনে এসপির সঙ্গে জোট করে মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ১০৫টি আসনে। আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ২৮টি আসন। তারও আগের নির্বাচনে পায় ২২টি আসন।
কংগ্রেসকে জাতীয় দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে ইউপিতে এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তবে ভারতজুড়ে কেউই জোর দিয়ে বলতে পারছে না—কংগ্রেস তেমন কিছু করতে পারবে; বরং কংগ্রেস ছেড়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সমাজবাদী পার্টিতে যাচ্ছে। কারণ, একমাত্র তারাই বিজেপিকে মোকাবিলা করে এগোতে সক্ষম।
এসপি গত নির্বাচনে পায় ৪৭টি আসন। এর আগের নির্বাচনে ২২৪টি এবং তার আগে ৯৭টি। মুলায়ম সিং যাদবের গড়া স্থানীয় এই দলই এবার বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ। মুলায়মের পুত্র অখিলেশ যাদব দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন। গত নির্বাচনে এই দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে। এবার সেটা হচ্ছে না। ফলে বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগ হচ্ছে। এই ভাগাভাগি পুষিয়ে নিতে অখিলেশ চেষ্টা করছেন বিজেপিবিরোধী ছোট ছোট দলকে কাছে টানতে এবং এই নির্বাচনকে ত্রিমুখী না করে দ্বিমুখী রাখতে। কেবল এ পথেই বিজেপির আসন কমতে পারে। তবে ভোট-পূর্ব সব জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী এসপির চেয়ে এগিয়ে। যদিও তাদের ভোট গত নির্বাচনের চেয়ে অনেক কমবে।
কংগ্রেস ও ছোট ছোট প্রগতিশীল দলের সংকট হলো, তারা সবাই কিছু কিছু ভোট পেলেও আসন পায় না। যাদব প্রভাবিত এসপি গতবার ২২ ভাগ ভোট পায়। বিএসপি পায় ২২ ভাগ। বিজেপি একা পায় ৪০ ভাগ। এসপি-বিএসপি দুই দল বিজেপির চেয়ে বেশি ভোট পেলেও আসনের হিসাবে উল্টো চিত্র দেখা যায়। ৪০৩ আসনের বিধানসভায় বিজেপি একা পায় ৩১২ আসন; আর ৬০ ভাগ ভোট বিজেপির বিপক্ষে পড়লেও আসনের হিসাবে সেটা ছিল এক শর কাছাকাছি মাত্র। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর প্রদেশবাসী যাদের ভোট দিয়েছে, তারা জনপ্রতিনিধি হয়ে বিধানসভায় যেতে পারেনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আসন্ন নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে যে দলই জিতুক, নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটির কাছে দফায় দফায় হেরে যাচ্ছে কোটি কোটি ভোটারের মতামত।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক