২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বৈশ্বিক উন্নয়নে বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থা লাগবে

ডিজিটাল বিপ্লবের বয়স কম নয়, তবু আজও সত্যিকারের বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি
ছবি : রয়টার্স

ডিজিটাল বিপ্লবের বয়স কম নয়, তবু আজও সত্যিকারের বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তার বদলে আমরা ডিজিটাল পুঁজিবাদের এমন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রূপরেখা পাচ্ছি যা মুখ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহু বছর ধরে নিজ নিজ মডেল অনুযায়ী এগিয়ে নিচ্ছে এবং তারা উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমানভাবে সেগুলো রপ্তানি করে যাচ্ছে। বড় বড় শক্তিগুলো ডিজিটাল খাতে বৈশ্বিক আদল নিয়ে এগিয়ে না আসায় প্রযুক্তি খাতের সমস্যার সর্বজনীন সমাধান অধরা থেকে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, আজকের এই বিশ্বে কী ধরনের বিকল্প ডিজিটাল ব্যবস্থা, বিশেষ করে অর্থ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে যা বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থাকে এক সুতোয় গাঁথতে পারবে। ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য না দিয়ে তা সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার কীভাবে বানানো যাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে।

এটি ঠিক যে, ডিজিটাল অর্থনীতিকে চালিত করে এমন প্রণোদনাগুলোকে পুনর্গঠন করা সহজ কাজ হবে না। তবুও, সম্প্রতি নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এই চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ৩৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্দেশীয় অর্থনৈতিক সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) আন্তর্জাতিক শুল্ক সালিসি মোকাবিলা করার একটি উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো (বিগ টেক ফার্ম) এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিল্প বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি ডিজিটাল বাজারে অযাচিত প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্ষমতা চর্চার তদন্ত করার জন্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে, চীন সরকার দেশটির ব্যাপক পরিসরে সম্প্রসারিত ডিজিটাল বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন প্রবর্তন করেছে এবং একটি অভ্যন্তরীণ অনাস্থা অভিযান চালাচ্ছে।

ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সব বিষয়ে একমত হবে না। কিন্তু তারা আরও উন্মুক্ত এবং সহযোগিতামূলক ডিজিটাল ব্যবস্থার রূপরেখা পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদান করে। যদি তারা এই দূরতিক্রম্য লক্ষ্য অর্জনে জোটবদ্ধ হয় তাহলে আগে তাদের বুঝতে হবে তারা ঠিক কী অর্জন করতে চাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ভিত্তিগত কাঠামোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যে শেকড় গেড়েছে।

আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) তার জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন নামের উপাত্ত সুরক্ষা বিধির ওপর ভিত্তি করে উপাত্ত, ডিজিটাল বাজার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে আরও বিশদ পরিসরে নৈতিকতাভিত্তিক নজরদারি চালাচ্ছে। অন্যদিকে, স্পেন ও জার্মানির মতো দেশগুলো এখন উপাত্ত-আহরণভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলকে সরাসরি অনুসরণ করছে।

বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রকেরা এবং গভর্নিং কর্তৃপক্ষগুলো কীভাবে তাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা এজেন্ডাকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা যায় তা নিয়ে ভাবছে। কীভাবে ডিজিটাল প্লেয়ারদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজেদের দিকে টানা যায় এবং তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মানানসই করার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলো কীভাবে গঠন করা যায় তা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে। ক্ষমতাধর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর লাগাম টেনে ধরা যদি প্রতিটি কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী আরও কার্যকর ডিজিটাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার একটি সাধারণ ভিত্তি তৈরি হতে পারে।

ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সব বিষয়ে একমত হবে না। কিন্তু তারা আরও উন্মুক্ত এবং সহযোগিতামূলক ডিজিটাল ব্যবস্থার রূপরেখা পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদান করে। যদি তারা এই দূরতিক্রম্য লক্ষ্য অর্জনে জোটবদ্ধ হয় তাহলে আগে তাদের বুঝতে হবে তারা ঠিক কী অর্জন করতে চাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ভিত্তিগত কাঠামোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যে শেকড় গেড়েছে।

চীনের বেইদু নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম, ভারতের ইন্ডিয়ান নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম অথবা ইউরোপের গ্যালিলিও সিস্টেম—প্রত্যেকেরই নিজস্ব পরিচালন কাঠামো আছে। এসব ডিজিটাল ব্যবস্থার মধ্যে বৈশ্বিক সমন্বয় নেই। এতে দুটি বড় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, এই সমন্বয়হীনতা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং মহামারি মোকাবিলার মতো বিষয়কে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে।

দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো ভবিষ্যতের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য প্রতিযোগী দৃষ্টিভঙ্গির অসংগতি। অনেক উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতি কীভাবে তাদের ডিজিটাল ক্ষমতা প্রসারিত করা যায় তা নিয়ে ভাবছে এবং এর জন্য অধিক ক্ষমতাধর দেশগুলোর প্রযুক্তি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকছে।

এই দুটি বিষয়কে আমলে নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানীক ও জাতীয় পর্যায়ে যদি প্রযুক্তির প্রাপ্যতা সহজ করা না যায় তাহলে ডিজিটাল অর্থনীতি আশাবহভাবে এগোতে পারবে না। জলবায়ুর প্রভাব ও মহামারিও মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে উঠবে।

আশার কথা, কোভিড-১৯ মহামারির দুই বছর পর বড় বড় দেশ নির্দিষ্ট কিছু উপাত্ত পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদানের প্রয়োজনীয়তা টের পাচ্ছে। এখন তাদের সবার জন্য প্রয়োজনীয় অন্য খাতগুলোকেও শনাক্ত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

জোস এন্টসমিঙ্গার যুক্তরাজ্যের ইউসিএল ইনস্টিটিউট ফর ইননোভিশন অ্যান্ড পাবলিক পারপোজ-এ পিএইচডি গবেষণারত; মার্ক এসপোসিতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নেক্সাস ফ্রন্টিয়ারটেক-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা; টেরেন্স সি নেক্সাস ফ্রন্টিয়ারটেক-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ওলাফ গ্রোথ ক্যামব্রিয়ান ডট এআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।