বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর রায় বলেছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই (বিচারক অপসারণ–সংক্রান্ত৯৬ অনুচ্ছেদ) মৌলিক কাঠামো। কথা উঠেছে রায়ের প্রাসঙ্গিক আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে। আমরা লক্ষ করি, সংসদীয় গণতন্ত্র ও রাজনীতি নিয়ে যত বেশি আলোচনা হয়েছে, ঠিক তেমন গুরুত্বের সঙ্গে সংবিধানের অন্যান্য অনুচ্ছেদ কীভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ন্যুব্জ করে রেখেছে, তা আলোচিত হয়নি। বিচারকেরা প্রাসঙ্গিকভাবে এটা আলোচনা করেননি যে, চতুর্থ সংশোধনীর ক্ষত এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের জারি করা সর্বাধিক সামরিক ফরমান এখন পর্যন্ত সংবিধানের বিচার বিভাগের অংশে রয়ে গেছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সামগ্রিক বিষয়টি উঠে না আসাই রায়ের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
আমরা এ কথাও মনে রাখব, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে অবিকল ফিরিয়ে আনার মধ্যেও একটা দুর্বল দিক আছে। ১৯৭৫ সালে সংসদের কাছ থেকে ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা নেওয়া হয়েছিল, তাই জিয়ার আনা বিধানটা ‘অপেক্ষাকৃত উন্নত’ বিবেচনায় আপিল বিভাগ রেখে দিয়েছেন। সুতরাং তুলনাটা করা হয়েছে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার সঙ্গে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে বিচারকেরা সামগ্রিকভাবে দেখেননি। তাঁরা খণ্ডিতভাবে শুধুই ৯৬ অনুচ্ছেদের আওতায় দেখেছেন। আর সে কারণে তাঁরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকেই মৌলিক কাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আবার যে কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রীর পূর্বানুমোদন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তই শুরু করতে পারবে না, তেমন একটি মারাত্মক দুর্বলতা সম্পর্কেও রায়ে কোনো পর্যবেক্ষণ নেই।
এটা ঠিক যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর রায়ে ১১৬ অনুচ্ছেদসংক্রান্ত (নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত) আপিল বিভাগের পূর্ববর্তী তিনটি রায়ের পর্যবেক্ষণের ধারাবাহিকতায় ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধান পরিপন্থী বলেছেন। এর বাইরে আরও একটি রায়ের (দশ বিচারক খ্যাত রায়) কথাও তিনি উল্লেখ করতে পারতেন।কিন্তু বিস্ময়করভাবে অন্য বিচারকেরা তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করলেও সহমত প্রকাশ করেননি। তাঁরা অবশ্য নিশ্চিত করেছেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে তাঁরাও ‘অপরিবর্তনীয় মৌলিক কাঠামো’ হিসেবে স্বীকার করেন। কিন্তু অধস্তন আদালত যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, সংবিধানে যদি সে কারণে ‘দ্বৈত শাসন’ টিকে থাকে, তাহলে মৌলিক কাঠামো কী করে মৌলিক কাঠামোর মর্যাদা পেতে পারে? এটা সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার যে প্রধান বিচারপতির ১১৬ অনুচ্ছেদসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণকে চারজন বিচারক প্রাসঙ্গিক নয় বললেন।
অথচ কী আশ্চর্য, তথাকথিত নিম্ন আদালতের বিচারকদের অপসারণ সরকারের হাতেই থাকল। উচ্চ আদালতের বিচারকের থেকে তাঁরা সংখ্যায় ১৫ গুণ বেশি, তাঁদের থেকে মামলা নিষ্পত্তি করেন অন্তত সাত গুণ বেশি, আর নিম্ন আদালতই মূল বিচারিক আদালত হিসেবে স্বীকৃত। এ নিয়ে চার বিচারকের কোনো পর্যবেক্ষণ না দেওয়া রায়টির একটি বড় দুর্বলতা বলে মনে করি। এমনকি অ্যামিকাস কিউরিরাও এ নিয়ে কিছু বলেননি। আর সম্ভবত এ কারণেই আইনমন্ত্রী মূল রায়কে অগ্রহণযোগ্য বললেও ওই চারজনের ওই বিষয়ের নীরবতাকে ‘দ্বিমত’ অভিহিত করে তাঁদের তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন। এমনকি বলেছেন, ১১৬-সংক্রান্ত প্রধান বিচারপতির রায় ‘যুক্তিতাড়িত নয়, বরং আবেগ ও বিদ্বেষতাড়িত।’
বিচারকেরা যদি অবসরে গিয়ে সরকারের দেওয়া পদ-পদবি গ্রহণে উদ্গ্রীব থাকেন, বিচারকদের নিয়োগে যদি নির্বাহী বিভাগের প্রাধান্য থাকে, দশ বিচারকের মামলার রায়ে যেভাবে বিচারক বাছাইয়ে আপিল বিভাগ নিজেই রীতিনীতি বেঁধে দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের যথাভূমিকা পালনে যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জোর থাকে কী করে? সেটা আমরা কীভাবে মৌলিক কাঠামো হিসেবে মানব? এ ছাড়া বিচারকদের বেতন-ভাতা যে অপ্রতুল, বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের জন্য বরাদ্দ যে ভীষণ রকম অকিঞ্চিৎকর এবং এসব ঘটনায় যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নামের মৌলিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বদা হুমকির মুখে থাকছে, তারও কোনো প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ রায়ে নেই। অথচ ৭০ অনুচ্ছেদের (সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিং সংক্রান্ত)আলোকে সংসদের গুণমান নিয়ে আলোচনাটা প্রায় সবাই বিস্তারিত করেছেন।
আবার প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে ১১৬ অনুচ্ছেদ যখন গুরুত্ব পেয়েছে; তখন সবারই মনে পড়বে যে, সরকারের সঙ্গে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে একটা টানাপোড়েন চলছে। কিন্তু অবসরে গিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধার দিকে নজরদান এবং তা গ্রহণের মতো বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের কোনো টানাপোড়েন নেই। এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের নিজের দেওয়া ইতিপূর্বের রায়গুলোতে দেওয়া নির্দেশনার কীভাবে ব্যত্যয় ঘটছে, তার আলোচনাও প্রাসঙ্গিক হতে পারত।
এটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক ছিল যে, ৯৯ অনুচ্ছেদে (অবসরের পর বিচারপতিদের লাভজনক পদ গ্রহণসংক্রান্ত) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার হাত দেয়নি। কারণ, ৯৯ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুরক্ষার এক অতন্দ্রপ্রহরী। বাহাত্তর সালের এই বিধানে বলা ছিল, বিচারকেরা অবসরে গিয়ে প্রজাতন্ত্রের কোনো পদে যোগ দিতে পারবেন না। অথচ এই অনুচ্ছেদটিকে মৌলিক কাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করা হলো না।পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে বিচারপতি খায়রুল হক এটিকে পরোক্ষভাবে অবৈধ চিহ্নিত করেন। তাঁর সেই রায়মতে তাঁর বর্তমান পদ বৈধ নয়। তিনি তাঁর রায়ে সংবিধানের বিশেষ রাজনৈতিক অনুচ্ছেদগুলো (প্রস্তাবনা ও ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধসহ আটটি) তিনি নির্দিষ্টভাবে মূল সংবিধানে ফিরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু বিচার বিভাগীয় ৯৬, ৯৯ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ কিন্তু নির্দিষ্টভাবে পুনরুজ্জীবিত করার রায় দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
তিনটি তথ্যগত অসংগতি
বিচার বিভাগ প্রশ্নেই রায়ে তিনটি তথ্যগত অসংগতি চোখে পড়ল। প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘চতুর্থ সংশোধনীতে নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত ১১৬ অনুচ্ছেদে “সুপ্রিম কোর্টের” পরিবর্তে “রাষ্ট্রপতি” প্রতিস্থাপন করা হলেও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিধান ছিল।’ আসলে তা ছিল না। জিয়া সামরিক ফরমান দিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ওই পরামর্শের বিধানটি যুক্ত করলে পরিস্থিতির একটু উন্নতি ঘটে।
বিচারপতি মো. ইমান আলী লিখেছেন, ‘সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদে সামরিক ফরমান দিয়ে আনা পরিবর্তন পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলেছিলেন। অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংসদ সামরিক ফরমানটি ফিরিয়ে এনেছে।’ এখানে দায় শুধু সংসদের নয়, আদালতকেও নিতে হবে। এটা ঠিক যে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে ওই ফরমানটি বাতিল করেন। কিন্তু ২০ জুন ২০১১ বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান িবচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ ওই ফরমানটি মার্জনা করেছিলেন।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার লিখেছেন, ‘২০১১ সালে বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫(২)গ অনুচ্ছেদটি যুক্ত করা হয়। অথচ সরকার নিয়োগসংক্রান্ত আইন তৈরি না করে অপসারণের আইন করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।’ ৯৫(২)গ অনুচ্ছেদে বিচারকদের ‘অতিরিক্ত যোগ্যতা’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটিও জিয়ার একটি সামরিক ফরমান। পঞ্চম সংশোধনীতে এটি যুক্ত করার পর কোনো সরকারই বিচারকদের যোগ্যতা নির্ধারণী এই আইন তৈরি করেনি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার ধারণায় এটা স্বীকৃত যে, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারকের সংখ্যা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট থাকতে হবে। অথচ মৌলিক কাঠামো হিসেবে দেখতে গিয়ে বিচারকেরা তাঁদের রায়ে এ বিষয়টি সম্পর্কে কোনো প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেননি। আপিল বিভাগের বিচারকসংখ্যা গেজেটে নির্দিষ্ট থাকলেও সরকার তা মানে না।
শুভংকরের ফাঁকি
১৯৭২ সালের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে লেখা হলো, বিচার বিভাগ পৃথক করতে হবে। ১১৬ অনুচ্ছেদে বিচারকদের শৃঙ্খলা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু ক্রান্তিকালীন বিধানাবলির বৈধতাদানসংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদে একটি শুভংকরের ফাঁক রাখা হয়। এতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৪ থেকে ১১৬ ক অনুচ্ছেদের আওতায় যাবতীয় কার্যক্রম (বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা বিধান, তদারকি) ‘যথাশীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়িত’ করা হবে। আর তার আগ পর্যন্ত সংবিধান প্রবর্তনের আগে যেভাবে চলেছে সেভাবে চলবে। আবার এই বিধানকে ৭খ অনুচ্ছেদের আওতায় অপরিবর্তনীয় মৌলিক কাঠামোও বলা হয়েছে। পরিহাস হলো, ২০১১ সালে এই ১৫০ অনুচ্ছেদের তফসিলে সংশোধনী আনা হলেও বাহাত্তরে যুক্ত করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাবিনাশী ওই কালাকানুন বহাল রাখা হয়েছে। এর লক্ষ্য বিচার বিভাগকে কবজায় রাখা। এ ব্যাপারে সব সরকারের ঐকমত্য এবং এটা যে মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করে, সে বিষয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক ছিল।
শুধু বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মাত্র একটি বাক্যে ১৫০ অনুচ্ছেদের চতুর্থ তফসিলের ৬(৬) নম্বর প্যারাগ্রাফের উল্লেখ করেছেন। শুধু বলেছেন, বিচার বিভাগ পৃথক্করণে আইনসভা ও সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আপিল বিভাগ বিধি তৈরিতে সংসদকে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু বলেননি যে পঞ্চদশ সংশোধনীতেও এটি টিকিয়ে রাখার সাংবিধানিক তাৎপর্য কী ভয়ংকর।
সংবিধানের কোনো একটি অনুচ্ছেদকে খণ্ডিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের পরিপন্থী অভিহিত করে প্রধান বিচারপতি তাকে ‘আইনগত কর্তৃত্বহীন’ হিসেবেও চিহ্নিত করলেন। কিন্তু তাকে তিনি ১৫০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে আরও ভালো হতো। ১১৬ অনুচ্ছেদ যদি মৌলিক কাঠামোকে আঘাত দেয়, তাহলে ১৫০ অনুচ্ছেদের ওই বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আরও ক্ষতিকর।
বাক্স্বাধীনতা ছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অর্থহীন। রায়ে ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইনটি বাতিল করার ফলে সংসদে প্রশ্ন উঠেছে, সাংসদেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এ কথা রায়ে আছে। কিন্তু রায়ে এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই যে, স্বাধীন বাংলাদেশে করা আদালত অবমাননাসংক্রান্ত প্রথম আইনটি বাতিলে গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বিতর্ক আবারও দেখাচ্ছে, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপূরক। ওই আইনের একটি-দুটি বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি ছিল। কিন্তু আদালত গোটা আইনটিকেই বাতিল করেছেন। আদালত অবমাননার শাস্তি আইনমতে দিতে হবে, এটাই সংবিধানের নির্দেশ। এখানে শূন্যতা চলছে। আদালত অবমাননার আইন না থাকায় মনে হচ্ছে যাঁরা দুর্দমনীয় ও ক্ষমতাবান, তাঁরা অনবরত তা করে যেতে পারেন এবং আদালত সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করছেন। অন্যদিকে, গণমাধ্যম অতি সতর্কতার কারণে গঠনমূলক সমালোচনা থেকেও বিরত থাকছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ নেই। সংসদে রায় এবং বিচারকদের নিয়ে কবে কী অযথাযথ আলোচনা হয়েছে, তা বিস্তারিত এসেছে। প্রধান বিচারপতি এসব প্রসঙ্গ তুলেই চলমান ‘সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপরিপক্ব’ বলেছেন। কিন্তু এই ‘অপরিপক্বতা’ শুধু রাষ্ট্রের দুটি স্তম্ভই দেখায়, তা সত্য নয়। কোনো সংসদীয় গণতন্ত্র বিচার বিভাগকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যায় না।
বিচারক নিয়োগে প্রলয় ঘটেছিল, কিন্তু তা কী ছাপ রাখছে, তারও প্রাসঙ্গিক আলোচনা প্রত্যাশিত ছিল। বিচারকদের তরফে আচরণবিধি লঙ্ঘনের আলোচিত ঘটনাগুলোর উল্লেখ বা তার কোনো পর্যালোচনা রায়ে একদম অনুপস্থিত। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী কারণে এতকাল ঘুমন্ত ছিল, তা এখন কেন সক্রিয় হবে বলে জনগণ মনে করবে, তার কোনো ব্যাখ্যা রায়ে নেই। পর্যবেক্ষণে বিচার বিভাগীয় ত্রুটিবিচ্যুতিকে শুধুই ‘অন্য দুটি স্তম্ভের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো’ থাকার কথা বলা হয়েছে। পানিতে নাক উঁচু করে রাখা বা ডুবুডুবু অবস্থা কেন ও কীভাবে এটা হলো? এ জন্য তো শুধু সরকার ও সংসদকেই দায়ী করা অন্যায্য হবে।দুটি স্তম্ভ সাবজেকটিভ, অর্থাৎ চোখে আঙুল দিয়ে আর একটি স্তম্ভ, অর্থাৎ বিচার বিভাগ নিরেট অবজেকটিভ বা সমালোচনার একদম বাইরে থেকেছে।
আমাদের বড় আক্ষেপ, এই রায়ে বিচারকেরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বরূপ উদ্ঘাটনে খণ্ডিত ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷