বাইডেন মাত্রই লাল বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। পারমাণবিক যুদ্ধ এখন সম্ভাবনা নয়, হাজির হওয়া বাস্তবতা। ইউক্রেনের মাটিকে নরম ভেবে রাশিয়া যে ভুল করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও সেই ভুল করছে পুতিনের সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে। যখন তুরস্কে ইউক্রেন আর রাশিয়ার কর্মকর্তারা কঠিন ও দুর্লভ আপসরফার জন্য পথ হাতড়াচ্ছেন, তখন আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য যা করা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র সেটাই করছে। সব দেখেশুনে তাই প্রশ্ন জাগছে, ইউক্রেন যুদ্ধটা কার বেশি দরকার? পুতিনের, জেলেনস্কির, নাকি জো বাইডেনের?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পোল্যান্ডে গিয়ে দুটি হাই ভোল্টেজ কথা বললেন। পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বিচারের কথা তুললেন, আর বললেন মস্কোয় ‘রেজিম চেঞ্জে’র কথা। মনে পড়ে চিলিতে সালভাদর আয়েন্দের জনপ্রিয় সরকারকে রক্তাক্ত ক্যুর মাধ্যমে হত্যা করার কথা। মনে পড়ে ব্রাজিলের গণমুখী প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে জেলে পুরে মার্কিন বশংবদ বলসোনারোকে ক্ষমতায় আনার কথা। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান অভিযোগ তুলেছেন, বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে। পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো রাশিয়ার প্রতিবাদ না করার শাস্তি দিতে চাইছে ইত্যাদি। তাই বাইডেনের এই চরমপন্থী কথাকে হালকাভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার গুরুত্ব দিয়ে নেওয়াও যাচ্ছে না।
বাইডেন প্রায়ই ভুলভাল বকে থাকেন। একবার মঞ্চে স্ত্রীর বদলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হারিসকে ফার্স্ট লেডি ডেকে বসলেন। আরেকবার বোনকে স্ত্রীর জায়গায় বসালেন। আরেকবার তো নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান প্রতিপক্ষের নামটাই (ডোনাল্ড ট্রাম্প) তিনি ভুলে যান।
হালকা চালেই বলুন আর গম্ভীরভাবেই বলুন, দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের হুমকিকে পুতিন ধরে বসেছেন। ডেইলি মেইলের খবর: পুতিন সাইবেরিয়ায়, তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরাল পর্বতমালার বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন। খবরটা রাশিয়াই ফাঁস হতে দিয়েছে, যাতে ইউরোপ পরিস্থিতির গুরুত্বটা বুঝতে পারে। ২৩ ফেব্রুয়ারি জারি করা পারমাণবিক সতর্কতা এখনো বহাল রেখেছে রাশিয়া। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া তার ব্যালিস্টিক মিসাইল বাহিনীর পূর্ণ মহড়া করেছে। ওয়াশিংটন তা-ও বুঝতে চাইছে না। পুতিন বারবার বলেছেন, অস্তিত্বের হুমকি ঠেকাতে তিনি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। ইউক্রেনে রাশিয়া সর্বশক্তি নিয়োগ করেনি ওয়াশিংটনকে এটাই বোঝাতে যে ইউক্রেন হলো মহড়া, বড় যুদ্ধ সামনে আছে, যদি ন্যাটো পিছু না হঠে।
পুতিনের বিরুদ্ধে রুশদের উসকে দেওয়ার ফল বুমেরাং হবে। সোভিয়েত জমানাতেও কোনো পরিস্থিতিতেই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট মস্কোর ক্ষমতা পরিবর্তনের কথা তোলেননি। রুশরা ভয়ানক আত্মমর্যাদাবান জাতি। তারা পুতিনকে যদি অপছন্দও করে, আমেরিকাকে বন্ধু বলে ভাবার কোনো কারণ নেই তাদের। তারা লজ্জাজনকভাবে সোভিয়েতের পতন ঘটতে দেখেছে, তারা দেখেছে পাশ্চাত্যের মিত্র মাতাল ইয়েলৎসিনের হাতে রাশিয়ার পর্যুদস্ত দশা। কোনো জাতিই কারজাই কায়দার সরকার মেনে নিতে চায় না।
তবে বাইডেন মনে হয় সত্যি বলছেন। হেনরি কিসিঞ্জারের জীবনীকার ইতিহাসবিদ নিয়াল ফার্গুসন ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ব্লুমবার্গ নিউজে প্রকাশিত লেখায় এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার মুখের কথা তুলে দিয়েছেন: একমাত্র শেষ খেলা হলো পুতিন সরকারের পতন। বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে এটা ভাবেনি। রাষ্ট্রীয় নীতি হুটহাট করে তৈরি হয় না আমেরিকায়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি নুলান্ড মার্কিন কংগ্রেসের কাছে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার পালাবদলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। পরের হিসাব আমাদের জানা নেই। তবে হিলারি ক্লিনটনের একটা ফাঁস হওয়া মেইলের কথা বলা যায়। ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তিনি হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তাকে মেইলে বলেন, ‘তোমাকে আমরা হোয়াইট হাউসে চাই পুতিন-পরবর্তী রাশিয়া বিষয়ে কৌশল প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য।’
বাইডেন আর পুতিন যখন পরস্পরকে ধ্বংসে নেমেছেন, তখন জেলেনস্কিই পারেন ইউক্রেনকে বাঁচাতে। পারমাণবিক যুদ্ধের কেয়ামত এড়ানোর চাবিটা ইতিহাস তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা ছোড়ার হুকুম দিয়েই দিয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত আমেরিকান সেনারা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় সে সময় পৃথিবী একচুলের জন্য বেঁচে যায়। ভাগ্য এবারও পৃথিবীকে বাঁচাবে আর বাকিরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এমনটা নাও হতে পারে।
‘পুতিন-পরবর্তী’ এই খোয়াব থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ট্রয়ের ঘোড়া বানিয়ে রুশ দুর্গ দখল করতে চেয়েছে। একের পর এক পূর্ব ইউরোপীয় দেশে ‘রঙিন’ বিপ্লব ঘটানো হয়েছে। বাকি ছিল ইউক্রেন, বেলারুশ আর কাজাখস্তান। ইউক্রেনের জন্য পরিকল্পিতভাবে জেলেনস্কি নামক এক সাধারণ ব্যক্তিকে প্রথমে দেশটির জননায়ক বানানো হয়। দেশটির শীর্ষ ধনকুবের জায়নাবাদী কোলোমোয়িস্কির টাকা ও মিডিয়া সাম্রাজ্য জেলেনস্কিকে নির্বাচিত করায় খেটেছে। রুশপন্থী সরকারকে উচ্ছেদের সময় ইসরায়েলের পাঠানো স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁদের হয়ে কাজও করেছেন। জেলেনস্কি অন্য ধনকুবেরদের বেকায়দায় ফেললেও কোলোমোয়িস্কির সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার তছরুপের কিছুই করেননি। উল্টো তিনি হয়ে ওঠেন সরকারের বাইরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং একটি প্রদেশের গভর্নর। ধনকুবের ও রাষ্ট্রনায়কদের অর্থ পাচারের নথিপত্র ফাঁসের জন্য বিখ্যাত প্যান্ডোরা পেপারসে জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রীর নামও আছে। লন্ডনসহ বিভিন্ন ‘অফশোর’ কোম্পানিতে তাঁদের অগাধ ধনসম্পদের বিবরণ পশ্চিমা গণমাধ্যমে ভালোভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।
এহেন জেলেনস্কি না পারবেন ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে, না পারবেন আপস করতে। কারণ, তাঁর নিয়মিত সেনাবাহিনী মোটামুটি বিধ্বস্ত। আবার রাশিয়ার সঙ্গে আপসের হাত বাড়ালেই স্বপক্ষীয় বুলেট তাঁর মাথায় বিঁধতে পারে। ইউক্রেনে যারা লড়ছে, তারা মূলত দেশটিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি। পুতিন তাদের নাৎসিবাদী বলে থাকেন আর আমেরিকার কাছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। পরিস্থিতি অনেকটা সোভিয়েত দখলাধীন আফগানিস্তানের মতো। তালেবান ও মোজাহিদরা ছিল তখন আমেরিকার জানপসন্দ ‘হিরো’। কিছুদিন আগেও পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়ন ও রাইট সেক্টরকে নাৎসিবাদ প্রভাবিত বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতিতে বদলে গেছে। এখন তারা বাইডেন-কথিত স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বৈশ্বিক লড়াইয়ের মুক্তিযোদ্ধা। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধারা ইউক্রেনের হয়ে লড়ছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো অনেক আগে থেকেই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। সিরিয়ায় যেভাবে আইএস কাজ করেছে আসাদ সরকারের বিপক্ষে, ইরাকে তারা ছিল ইরানপন্থী সরকারের বিপক্ষে, তেমনি ইউক্রেনে নব্যনাজিবাদীরা পুতিনের বিপক্ষে। ইউক্রেন হয়েছে আমেরিকা আর রাশিয়ার প্রক্সি যুদ্ধের ময়দান।
বাইডেনের কথায় ফেরা যাক। ইউক্রেন আপসের আলোচনা শুরু করা মাত্র তিনি বেলজিয়ামে বসে ইউরোপীয়দের সঙ্গে দূরত্ব মেটাতে গেলেন। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্সসহ অনেক রাষ্ট্রই রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে পারছে না। তিনি গেলেন পোল্যান্ডে, উসকে দিলেন পরিস্থিতি। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গেলেন ইসরায়েলে, গেলেন মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু কোথায়ও চাহিদামতো সমর্থন মেলেনি। এদিকে আফ্রিকার নেতারা রাশিয়ার বিপক্ষে যেতে নারাজি জানিয়েছেন। তবু পিছু হঠতে পারছেন না বাইডেন। ট্রাম্প সমালোচনার অস্ত্রে ধার দিচ্ছেন, নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধকে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের বৈশ্বিক লড়াইয়ের অংশ বানিয়ে দিলেন তিনি। অর্থাৎ তিনি একে বড় পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে ও দেখাতে চান। এর অর্থ, এই যুদ্ধ চলমান থাকবে। পেন্টাগন চায় দনবাস অঞ্চলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলমান থাকুক। তারপর মওকামতো পুতিনকে পাকড়াও করা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র তো হিসাব কষেই রেখেছিল, ইউক্রেন যুদ্ধে ৫০ হাজার ইউক্রেনীয়র মৃত্যু ঘটবে এবং শরণার্থী হবে অর্ধকোটি মানুষ। এভাবেই আটলান্টিক জোটের রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে দেখছে। ইউক্রেনের স্বাধীনতা তাদের কাছে জরুরি নয়, জরুরি হলো রাশিয়াকে ইউক্রেনে টেনে এনে পরাস্ত করা। বাইডেনের পোল্যান্ড সফরে তার ইঙ্গিত রয়েছে। সমগ্র ন্যাটো না হলেও ন্যাটোভুক্ত পোল্যান্ডকে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইউক্রেনকে ‘মুক্ত’ করার জন্য। অস্ত্র ও সেনা সেখানেই মজুত করা হচ্ছে। ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের ফলামুখ এখন পোল্যান্ড। ২০২০ সালে জার্মানির মার্কিন ঘাঁটি থেকে সাড়ে চার হাজার সেনা পোল্যান্ডে আনা হয়। গত দুই বছরে এই সংখ্যা আরও অনেক বেড়েছে।
জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রুশভাষী পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী থাকুক, বাকি অংশটা নিরপেক্ষ হয়ে থাকবে। অন্তত ১৫ বছরের জন্য ন্যাটোতে যোগ দেবে না ইউক্রেন। ক্রিমিয়ায় রুশ সার্বভৌমত্বও তারা মেনে নিতে রাজি। ইউক্রেন হরিলুটের সারিতে পোল্যান্ডও এক দাবিদার। পশ্চিম ইউক্রেনের ওপর তার দাবি রয়েছে। জারের আমলে রানি ক্যাথরিন পোল্যান্ড থেকে এই অংশটা কেড়ে নিয়েছিলেন।
কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তার জন্য ইউক্রেনকে দিয়ে দেওয়া ক্রিমিয়াকে রাশিয়া ফেরত নিয়েছে সত্য, কিন্তু বাকি ইউক্রেনকে নিয়ে রাশিয়ার সমস্যা ছিল না। তারা শুধু চেয়েছিল নিরাপত্তা গ্যারান্টি। যখন রোমানিয়া ও পোল্যান্ডে মার্কিন মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বসানো হয়ে গেছে, তখন ইউক্রেনেও একই কাজ করা মানে পারমাণবিক হামলার মুখে রাশিয়ার সমগ্র মিসাইল নিরাপত্তাব্যবস্থা অকেজো হয়ে যাওয়া। সবাই জানে, পারমাণবিক হামলা আগে যারা করে, তারাই সুবিধা পায়। পুতিন বারবার বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক-রাজনৈতিক, সবভাবে মস্কোকে ঘিরে ধরেছে, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ছাড় দেওয়া মানে রাশিয়াকে নব্বইয়ের দশকের চেয়েও খারাপ জায়গায় নিয়ে ফেলে দেওয়া।
ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর জেনারেলদের আগামী ৯ মের মধ্যে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শেষ করতে বলেছেন (২৫ মার্চ ডেইলি মেইল অনলাইন)। ১৯৪৫ সালের এই দিনে সোভিয়েত লাল ফৌজের হাতে বার্লিনের পতন হয়। এবারের ৯ মে-তে তারা তাদের ভাষায় ‘ইউক্রেনের নাজিমুক্তকরণ’ উদ্যাপন করতে চায়। কেবল এভাবেই নগ্ন আগ্রাসনকে আড়াল করতে পারবেন পুতিন। কিন্তু তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হুমকির প্রতিকার করতে হবে তাদের। রাশিয়ার পিছু হটার উপায় নেই। পিছু যাকে হঠতে হতো, তিনি জেলেনস্কি। মার্কিনদের কথায় নাচার খেসারত ইউক্রেনীয়রা আর কত দেবে? যদি ইউক্রেন আগামী ১৫ বছরের জন্য নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার সাংবিধানিক আইন করে, বিদেশি যোদ্ধা ও উপদেষ্টাদের ত্যাগ করে, কেবল তখনই ইউক্রেন স্বাধীন থাকতে পারে। নিজের ভুল শুধরে নিয়ে জেলেনস্কি তাঁকে ঘিরে থাকা ধনকুবের আর পশ্চিমাদের জবাব দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে তাঁকে হয়তো জীবন দিতে হতে পারে।
আমেরিকা ও রাশিয়া ইউক্রেনে যখন আটকে গেছে, তখন সৌদি আরব ইরানপন্থী ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। ব্রিটেন ইউক্রেন ছাড়ার শর্তে রাশিয়ার ওপর অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা বলে আলোচনায় ফিরতে চাইছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইউক্রেন যুদ্ধের পরে প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন। বাইডেন ভারতে পাঠিয়েছেন অবরোধের একজন প্রবক্তাকে। ইরান ইরাকে ইসরায়েলি অবস্থানে হামলা চালিয়েছে কয়েক দিন আগে। সিরিয়ায় রুশ সেনারা আইএসের ওপর হামলা বাড়িয়েছে। দোহায় উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলনে আরব বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। বারংবার ডলারের নিষেধাজ্ঞায় অতিষ্ঠ বহু দেশ বিকল্প আন্তর্জাতিক মুদ্রার জন্য রাস্তা খুলছে। কেউই আর এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে চাইছে না। পরিষ্কারভাবে বিশ্ব পক্ষ নিতে তৈরি এবং পুতিনের পক্ষও কম ভারী নয়।
বাইডেন আর পুতিন যখন পরস্পরকে ধ্বংসে নেমেছেন, তখন জেলেনস্কিই পারেন ইউক্রেনকে বাঁচাতে। পারমাণবিক যুদ্ধের কেয়ামত এড়ানোর চাবিটা ইতিহাস তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা ছোড়ার হুকুম দিয়েই দিয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত আমেরিকান সেনারা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় সে সময় পৃথিবী একচুলের জন্য বেঁচে যায়। ভাগ্য এবারও পৃথিবীকে বাঁচাবে আর বাকিরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এমনটা নাও হতে পারে।
ফারুক ওয়াসিফ লেখক ও প্রতিচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক
[email protected]